Thursday, December 3, 2015

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডিম খাওয়া কি ঠিক

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডিম খাওয়া কি ঠিক

আমাদের অনেকে কোলেস্টেরলের ভয়ে ডিম এড়িয়ে চলেন। অনেকেই মনে করেন ডিম খেলে কোলেস্টেরল বাড়ে, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। কিন্তু এ ধারণা একেবারেই অমূলক। ডিমে কোলেস্টেরল আছে। তবে তা মোটেও ক্ষতিকর নয় বরং উপকারী। প্রতিদিন একটি করে ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। ডিম খেয়ে আপনি ডাইবেটিস এড়াতে পারেন। সম্প্রতি আমেরিকান জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন-এ প্রকাশিত এক রিপোর্টে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, যারা সপ্তাহে মোটে একটা ডিম খান, তাদের তুলনায় যারা সপ্তাহে অন্তত চারটা ডিম খান, তাদের টাইপ-টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ৩৭ শতাংশ কমে যায়।
ইস্টার্ন ফিনল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা গত ১৯৮৪-১৯৮৯ এই পাঁচ বছর ২,৩৩২ জন ব্যক্তির খাদ্যাভ্যাসের ওপর গবেষণা পরিচালনা করেন। এদের বয়স ৪২ থেকে ৬০-এর মধ্যে। প্রায় ১৯ বছর পর দেখা যায়, তাদের মধ্যে মাত্র ৪৩২ জন টাইপ-টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন।
ওই গবেষণাতেই জানা যায়, রক্তে শর্করার পরিমাণের কম-বেশির ওপর ডিমের একটা ভালোরকম প্রভাব রয়েছে। দেখা গিয়েছ, যারা সপ্তাহে অন্তত চারটা করে ডিম খেয়েছেন, তাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত।
ডায়াবেটিস প্রধানত দুই ধরনের হয়। টাইপ ওয়ান এবং টাইপ টু। টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসে দেহে ইনসুলিন তৈরি হয় না। টাইপ টু ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে দেহে ইনসুলিন তৈরি হয়, তবে পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপন্ন হয় না । বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশ রোগীই টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।
গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, কোলেস্টেরল ছাড়াও ডিমে বেশ কিছু পুষ্টিকর উপাদান থাকে। যা শর্করার বিপাকে সহায়তা করে, যে কারণে টাইপ-টু ডায়াবেটিসের প্রবণতা কমে।
সম্প্রতি একটি গবেষণায় বলা হয়, টাইপ টু ডায়াবেটিস স্মৃতিশক্তি হ্রাস করতে পারে। এটি ব্যক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতার ওপর প্রভাব ফেলে প্রাত্যহিক কাজকে প্রভাবিত করে বিলম্বিত করে।
গবেষকরা বলেন, টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার মাত্র দুই বছরের মধ্যে এটি মস্তিষ্কে নিয়মিত রক্তপ্রবাহের ক্ষমতাকে নেতিবাচকভাবে পরিবর্তন করে; যা ব্যক্তির আচরণ এবং দৈনন্দিন কাজের দক্ষতাকে প্রভাবিত করে।

ডিম রোগ প্রতিরোধক ও পুষ্টিকর খাবার। ডিমের দুটি অংশ- সাদা ও হলুদ।

ডিমের সাদা অংশের মধ্যে থাকে,-
পানি ৮৮.০%,
 প্রোটিন বা আমিষ ১১.০%,
চর্বি ০.২% এবং
 খনিজ পদার্থ ০.৮%।
 বিভিন্ন খাবার তৈরিতে সহায়ক উপাদান হিসেবে ডিমের সাদা অংশ ব্যবহার হয়।
 যেমন- কেক, পেস্ট্রি, ক্যান্ডি, স্পঞ্জ কেক ইত্যাদি।
ডিমের হলুদ অংশ বা কুসুমের মধ্যে থাকে,-
৪৮.০% পানি,
 ১৭.৫% প্রোটিন বা আমিষ,
৩২.৫% চর্বি এবং
 ২.০% খনিজ পদার্থ ।
ডিমের কুসুম কোমল ও সহজে হজম হয়।
কুসুমের মধ্যে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও লৌহ আছে।
 ক্রিমের সঙ্গে ডিমের কুসুম ভালোভাবে মিশে যায় বলে এটা মেয়নেজ, মার্জারিন, আইসক্রিম ও ক্রিমক্রাকার তৈরিতে ব্যবহার হয়।
ডিম বেশিক্ষণ সিদ্ধ করলে কুসুমের বাইরের অংশে একটা কালো স্তর পড়ে, সেটা হলো আয়রন সালফাইড। ডিম যেভাবেই রান্না হোক না কেন ডিমের পুষ্টিগুণ অবিকৃত থাকে।
সহজে হজম ও সম্পূর্ণরূপে শোষিত হয় বলে ডিম একটি আদর্শ পুষ্টিকর খাবার।
ডিমের উপকারিতা
১. শারীরিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তি ডিম খেলে পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয় এবং আরোগ্য লাভে সহায়তা করে।
২. ডিমের কুসুম রিউম্যাটিক জ্বরকে প্রশমিত করে।
৩. ডিমে পিউরিন নেই বলে বাতের রোগীরা সহজেই ডিম খেতে পারে।
৪. গর্ভবতী মায়েদের প্রতিদিন একটি অথবা দুটি ডিম খাওয়া উচিত। তাহলে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হয় না।
৫. শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি, ক্ষয়পূরণ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও কার্যক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ডিম প্রয়োজন।
৬. ডিমের সাদা অংশে আছে অবিমিশ্র প্রোটিন, যা মূলত অ্যালবুমিন। আর রক্তে যখন অ্যালবুমিন কমে যায়, তখন ডিমের অ্যালবুমিন বা সাদা অংশ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।
৭. যেসব মহিলারা সপ্তাহে কমপক্ষে ৬টি ডিম খায় তাদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি ৪০ শতাংশ কমে যায়। ডিমের কুসুমে কোলিন নামক একটি প্রোটিন থাকে, যা মস্তিষ্ক গঠনে ভূমিকা রাখে।
৮. ডিমের একটি প্রধান খাদ্য উপাদান ভিটামিন-এ। ভিটামিন-এ রেটিনায় আলো শুষে নিতে সহায়তা করে, কর্নিয়ার পাশের মেমব্রেনকে রক্ষা করে এবং রাতকানা রোগের ঝুঁকি কমায়। মহিলাদের প্রতিদিন ৭০০ মাইক্রোগ্রাম ও পুরুষদের প্রতিদিন ৯০০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন-এ প্রয়োজন।
অন্যান্য তথ্য-
ডিমের ওপরের খোসার রঙের জন্য পুষ্টিগুণের কোনো তারতম্য হয় না। কাঁচা ডিম রান্না করা ডিমের চেয়ে পুষ্টিকর হলেও ডিম কখনো কাঁচা খাওয়া উচিত নয়।
অনেকের ধারণা, হাঁসের চেয়ে মুরগির ডিম অধিক পুষ্টিকর। আসলে হাঁসের চেয়ে মুরগির ডিম সুস্বাদু হলেও পুষ্টির দিক থেকে উভয়ে সমান। যদিও ডিমের আবরণ শক্ত, তারপর সব সময় জীবাণুমুক্ত নয়। যখন স্যাঁতসেঁতে অপরিষ্কার জায়গায় মুরগি ডিম পাড়ে তখন ডিমের আবরণের সূক্ষ্ম গর্ত দিয়ে জীবাণু প্রবেশ করে। সে জন্য ডিম রান্নার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
ডিম পুষ্টিকর হলেও ডিমের মধ্যে ভিটামিন-সি একেবারেই নেই।
অতএব নিয়মিত ডিম খান ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণ করুণ এবং সুস্থ্য থাকুন।

No comments:

Post a Comment

Thursday, December 3, 2015

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডিম খাওয়া কি ঠিক

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডিম খাওয়া কি ঠিক

আমাদের অনেকে কোলেস্টেরলের ভয়ে ডিম এড়িয়ে চলেন। অনেকেই মনে করেন ডিম খেলে কোলেস্টেরল বাড়ে, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। কিন্তু এ ধারণা একেবারেই অমূলক। ডিমে কোলেস্টেরল আছে। তবে তা মোটেও ক্ষতিকর নয় বরং উপকারী। প্রতিদিন একটি করে ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। ডিম খেয়ে আপনি ডাইবেটিস এড়াতে পারেন। সম্প্রতি আমেরিকান জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন-এ প্রকাশিত এক রিপোর্টে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, যারা সপ্তাহে মোটে একটা ডিম খান, তাদের তুলনায় যারা সপ্তাহে অন্তত চারটা ডিম খান, তাদের টাইপ-টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ৩৭ শতাংশ কমে যায়।
ইস্টার্ন ফিনল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা গত ১৯৮৪-১৯৮৯ এই পাঁচ বছর ২,৩৩২ জন ব্যক্তির খাদ্যাভ্যাসের ওপর গবেষণা পরিচালনা করেন। এদের বয়স ৪২ থেকে ৬০-এর মধ্যে। প্রায় ১৯ বছর পর দেখা যায়, তাদের মধ্যে মাত্র ৪৩২ জন টাইপ-টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন।
ওই গবেষণাতেই জানা যায়, রক্তে শর্করার পরিমাণের কম-বেশির ওপর ডিমের একটা ভালোরকম প্রভাব রয়েছে। দেখা গিয়েছ, যারা সপ্তাহে অন্তত চারটা করে ডিম খেয়েছেন, তাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত।
ডায়াবেটিস প্রধানত দুই ধরনের হয়। টাইপ ওয়ান এবং টাইপ টু। টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসে দেহে ইনসুলিন তৈরি হয় না। টাইপ টু ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে দেহে ইনসুলিন তৈরি হয়, তবে পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপন্ন হয় না । বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশ রোগীই টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।
গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, কোলেস্টেরল ছাড়াও ডিমে বেশ কিছু পুষ্টিকর উপাদান থাকে। যা শর্করার বিপাকে সহায়তা করে, যে কারণে টাইপ-টু ডায়াবেটিসের প্রবণতা কমে।
সম্প্রতি একটি গবেষণায় বলা হয়, টাইপ টু ডায়াবেটিস স্মৃতিশক্তি হ্রাস করতে পারে। এটি ব্যক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতার ওপর প্রভাব ফেলে প্রাত্যহিক কাজকে প্রভাবিত করে বিলম্বিত করে।
গবেষকরা বলেন, টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার মাত্র দুই বছরের মধ্যে এটি মস্তিষ্কে নিয়মিত রক্তপ্রবাহের ক্ষমতাকে নেতিবাচকভাবে পরিবর্তন করে; যা ব্যক্তির আচরণ এবং দৈনন্দিন কাজের দক্ষতাকে প্রভাবিত করে।

ডিম রোগ প্রতিরোধক ও পুষ্টিকর খাবার। ডিমের দুটি অংশ- সাদা ও হলুদ।

ডিমের সাদা অংশের মধ্যে থাকে,-
পানি ৮৮.০%,
 প্রোটিন বা আমিষ ১১.০%,
চর্বি ০.২% এবং
 খনিজ পদার্থ ০.৮%।
 বিভিন্ন খাবার তৈরিতে সহায়ক উপাদান হিসেবে ডিমের সাদা অংশ ব্যবহার হয়।
 যেমন- কেক, পেস্ট্রি, ক্যান্ডি, স্পঞ্জ কেক ইত্যাদি।
ডিমের হলুদ অংশ বা কুসুমের মধ্যে থাকে,-
৪৮.০% পানি,
 ১৭.৫% প্রোটিন বা আমিষ,
৩২.৫% চর্বি এবং
 ২.০% খনিজ পদার্থ ।
ডিমের কুসুম কোমল ও সহজে হজম হয়।
কুসুমের মধ্যে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও লৌহ আছে।
 ক্রিমের সঙ্গে ডিমের কুসুম ভালোভাবে মিশে যায় বলে এটা মেয়নেজ, মার্জারিন, আইসক্রিম ও ক্রিমক্রাকার তৈরিতে ব্যবহার হয়।
ডিম বেশিক্ষণ সিদ্ধ করলে কুসুমের বাইরের অংশে একটা কালো স্তর পড়ে, সেটা হলো আয়রন সালফাইড। ডিম যেভাবেই রান্না হোক না কেন ডিমের পুষ্টিগুণ অবিকৃত থাকে।
সহজে হজম ও সম্পূর্ণরূপে শোষিত হয় বলে ডিম একটি আদর্শ পুষ্টিকর খাবার।
ডিমের উপকারিতা
১. শারীরিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তি ডিম খেলে পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয় এবং আরোগ্য লাভে সহায়তা করে।
২. ডিমের কুসুম রিউম্যাটিক জ্বরকে প্রশমিত করে।
৩. ডিমে পিউরিন নেই বলে বাতের রোগীরা সহজেই ডিম খেতে পারে।
৪. গর্ভবতী মায়েদের প্রতিদিন একটি অথবা দুটি ডিম খাওয়া উচিত। তাহলে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হয় না।
৫. শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি, ক্ষয়পূরণ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও কার্যক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ডিম প্রয়োজন।
৬. ডিমের সাদা অংশে আছে অবিমিশ্র প্রোটিন, যা মূলত অ্যালবুমিন। আর রক্তে যখন অ্যালবুমিন কমে যায়, তখন ডিমের অ্যালবুমিন বা সাদা অংশ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।
৭. যেসব মহিলারা সপ্তাহে কমপক্ষে ৬টি ডিম খায় তাদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি ৪০ শতাংশ কমে যায়। ডিমের কুসুমে কোলিন নামক একটি প্রোটিন থাকে, যা মস্তিষ্ক গঠনে ভূমিকা রাখে।
৮. ডিমের একটি প্রধান খাদ্য উপাদান ভিটামিন-এ। ভিটামিন-এ রেটিনায় আলো শুষে নিতে সহায়তা করে, কর্নিয়ার পাশের মেমব্রেনকে রক্ষা করে এবং রাতকানা রোগের ঝুঁকি কমায়। মহিলাদের প্রতিদিন ৭০০ মাইক্রোগ্রাম ও পুরুষদের প্রতিদিন ৯০০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন-এ প্রয়োজন।
অন্যান্য তথ্য-
ডিমের ওপরের খোসার রঙের জন্য পুষ্টিগুণের কোনো তারতম্য হয় না। কাঁচা ডিম রান্না করা ডিমের চেয়ে পুষ্টিকর হলেও ডিম কখনো কাঁচা খাওয়া উচিত নয়।
অনেকের ধারণা, হাঁসের চেয়ে মুরগির ডিম অধিক পুষ্টিকর। আসলে হাঁসের চেয়ে মুরগির ডিম সুস্বাদু হলেও পুষ্টির দিক থেকে উভয়ে সমান। যদিও ডিমের আবরণ শক্ত, তারপর সব সময় জীবাণুমুক্ত নয়। যখন স্যাঁতসেঁতে অপরিষ্কার জায়গায় মুরগি ডিম পাড়ে তখন ডিমের আবরণের সূক্ষ্ম গর্ত দিয়ে জীবাণু প্রবেশ করে। সে জন্য ডিম রান্নার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
ডিম পুষ্টিকর হলেও ডিমের মধ্যে ভিটামিন-সি একেবারেই নেই।
অতএব নিয়মিত ডিম খান ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণ করুণ এবং সুস্থ্য থাকুন।

No comments:

Post a Comment