Showing posts with label The immortal poet Shamshur Rahman's favorite poem - অমর কবি শামসুর রাহমান এর প্রিয় কবিতা. Show all posts
Showing posts with label The immortal poet Shamshur Rahman's favorite poem - অমর কবি শামসুর রাহমান এর প্রিয় কবিতা. Show all posts

Wednesday, November 25, 2015

অমর কবি শামসুর রাহমান এর প্রিয় কবিতা , আমি উঠে এসেছি সৎকারবিহীন

অমর কবি শামসুর রাহমান এর প্রিয় কবিতা

আমি উঠে এসেছি সৎকারবিহীন
শামসুর রাহমান

একজন আধবুড়ো লোক, চাঁদকপালী গরু,
কতিপয় পাখি আর মুর্গির বাচ্চার জন্যে কান-খাড়া করা
বালক,
আকাশী রঙের শাড়িপরা বানডাকা নদীর মতো
এক তম্বী তৈরি করেছিলো চমৎকার দৃশ্য। এখন সেখানে
হারিয়ে যাওয়ার নিঃস্ব হাহাকার।
ওরা কেউ আজ নেই, সাঁঝবাতি নিয়ে দাওয়ায়
দাঁড়াবে কে? ওরা যেন
অনেক আগেকার সুর, পুরনো সারিন্দায় বাজানো,
কোনো আনাড়ি বাদকের হাত থেকে নিঃসৃত।

যে-ভাষা নদীর, হাওয়ার, নদীতীরবর্তী কাশফুলের,
কবরের ঘাসের, যে ভাষা নীরবতার,
সে ভাষায় আমি আজ কথা বলছি
হে-নগরবাসী। হে-ঝাল্মলে শহরের নাগরিকবৃন্দ,
আমিও নেই,
তবু উঠে এসেছি, সৎকারবিহীন। আমি কোনো অভিযোগ
নিয়ে আসি নি, আমার কোনো দাবি নেই
সরকারি-বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে। শুধু চাই,
একবার আমার দিকে তাকান
ভালো ক'রে, চোখ-কান খোলা রাখুন; আমিও
পুরুষোত্তমের মতো করাতে পারি বিশ্ব-দর্শন। কেউ
আমার প্রতি করুণা বর্ষণ করুন
চাই না আমি; সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আমি আসি,
চলে যাই হাওয়ার ঝাপ্টার মতো।

এখন অগি্ন আমাকে পোড়াতে পারে না, জলেরও ক্ষমতা নেই
আমাকে ডোবানোর, মাটি
করতে পারে না গ্রাস। আমার পায়ের পাতা নেই যে,
মাছ ঠোকরাবে, চোখের মণি নেই যে,
উপড়ে নেবে দাঁড়কাক, আমার মেদমজ্জা নেই যে
খুবলে নেবে শেয়াল-কুকুর।

অথচ দেখতে পাই সবকিছু, শুনতেও অসুবিধা হয় না;
যেখানেই যাই
কানে আসে বাঁচাও বাঁচাও ধ্বনি, অথবা হতে পারে
আমি নিজেই সেই ধ্বনি। সারাক্ষণ দেখি,
একটা রেসকু্য বোট পাক খাচ্ছে মধ্যযুগের রাত্রির ঘূর্ণিস্রোতে,
কেবলি দূরে সরে যাচ্ছে আমার প্রসারিত হাত থেকে, বহু দূরে।
অথচ এখন আমার
কোনো রেসকু্য বোট কিংবা লাল বয়ার প্রয়োজন নেই।

খুব বেশিদিন কি বেঁচেছিলাম?
এখন আমি ভাবি একটা নিকনো উঠোনের কথা,
পুকুরে নুয়ে-পড়া ডাল, ডাগর লাউয়ের মাচান,
মাদুরে মনসুর বয়াতীর বয়েতের মতো শুয়ে-থাকা, নোলকপরা
বেতফলরঙ যুবতীর কথা, ধোঁয়া ওঠা
লালচে ভাত, সোনালি শুরুয়ায় ডুবে-থাকা
এক টুক্রো মাছের কথা। লোকে বলে,
গানের গলা ছিলো আমার আমি সেই গানের কথাও ভাবি।

কিন্তু আমার সব কিছু ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে,
এমনকি আমার কণ্ঠস্বরও। আজ আমি
কথা বলি নদী, হাওয়া, কাশফুল কবরের ঘাস আর
নীরবতার ভাষায়।
Showing posts with label The immortal poet Shamshur Rahman's favorite poem - অমর কবি শামসুর রাহমান এর প্রিয় কবিতা. Show all posts
Showing posts with label The immortal poet Shamshur Rahman's favorite poem - অমর কবি শামসুর রাহমান এর প্রিয় কবিতা. Show all posts

Wednesday, November 25, 2015

অমর কবি শামসুর রাহমান এর প্রিয় কবিতা , আমি উঠে এসেছি সৎকারবিহীন

অমর কবি শামসুর রাহমান এর প্রিয় কবিতা

আমি উঠে এসেছি সৎকারবিহীন
শামসুর রাহমান

একজন আধবুড়ো লোক, চাঁদকপালী গরু,
কতিপয় পাখি আর মুর্গির বাচ্চার জন্যে কান-খাড়া করা
বালক,
আকাশী রঙের শাড়িপরা বানডাকা নদীর মতো
এক তম্বী তৈরি করেছিলো চমৎকার দৃশ্য। এখন সেখানে
হারিয়ে যাওয়ার নিঃস্ব হাহাকার।
ওরা কেউ আজ নেই, সাঁঝবাতি নিয়ে দাওয়ায়
দাঁড়াবে কে? ওরা যেন
অনেক আগেকার সুর, পুরনো সারিন্দায় বাজানো,
কোনো আনাড়ি বাদকের হাত থেকে নিঃসৃত।

যে-ভাষা নদীর, হাওয়ার, নদীতীরবর্তী কাশফুলের,
কবরের ঘাসের, যে ভাষা নীরবতার,
সে ভাষায় আমি আজ কথা বলছি
হে-নগরবাসী। হে-ঝাল্মলে শহরের নাগরিকবৃন্দ,
আমিও নেই,
তবু উঠে এসেছি, সৎকারবিহীন। আমি কোনো অভিযোগ
নিয়ে আসি নি, আমার কোনো দাবি নেই
সরকারি-বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে। শুধু চাই,
একবার আমার দিকে তাকান
ভালো ক'রে, চোখ-কান খোলা রাখুন; আমিও
পুরুষোত্তমের মতো করাতে পারি বিশ্ব-দর্শন। কেউ
আমার প্রতি করুণা বর্ষণ করুন
চাই না আমি; সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আমি আসি,
চলে যাই হাওয়ার ঝাপ্টার মতো।

এখন অগি্ন আমাকে পোড়াতে পারে না, জলেরও ক্ষমতা নেই
আমাকে ডোবানোর, মাটি
করতে পারে না গ্রাস। আমার পায়ের পাতা নেই যে,
মাছ ঠোকরাবে, চোখের মণি নেই যে,
উপড়ে নেবে দাঁড়কাক, আমার মেদমজ্জা নেই যে
খুবলে নেবে শেয়াল-কুকুর।

অথচ দেখতে পাই সবকিছু, শুনতেও অসুবিধা হয় না;
যেখানেই যাই
কানে আসে বাঁচাও বাঁচাও ধ্বনি, অথবা হতে পারে
আমি নিজেই সেই ধ্বনি। সারাক্ষণ দেখি,
একটা রেসকু্য বোট পাক খাচ্ছে মধ্যযুগের রাত্রির ঘূর্ণিস্রোতে,
কেবলি দূরে সরে যাচ্ছে আমার প্রসারিত হাত থেকে, বহু দূরে।
অথচ এখন আমার
কোনো রেসকু্য বোট কিংবা লাল বয়ার প্রয়োজন নেই।

খুব বেশিদিন কি বেঁচেছিলাম?
এখন আমি ভাবি একটা নিকনো উঠোনের কথা,
পুকুরে নুয়ে-পড়া ডাল, ডাগর লাউয়ের মাচান,
মাদুরে মনসুর বয়াতীর বয়েতের মতো শুয়ে-থাকা, নোলকপরা
বেতফলরঙ যুবতীর কথা, ধোঁয়া ওঠা
লালচে ভাত, সোনালি শুরুয়ায় ডুবে-থাকা
এক টুক্রো মাছের কথা। লোকে বলে,
গানের গলা ছিলো আমার আমি সেই গানের কথাও ভাবি।

কিন্তু আমার সব কিছু ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে,
এমনকি আমার কণ্ঠস্বরও। আজ আমি
কথা বলি নদী, হাওয়া, কাশফুল কবরের ঘাস আর
নীরবতার ভাষায়।