Monday, November 9, 2015

কাজী নজরুল ইসলামের এর কবিতা ‘ঝিঙে ফুল’-Bangla Kobita ও জিঙে সবজি



কাজী নজরুল ইসলামের এর কবিতা ‘ঝিঙে ফুল’-Bangla Kobita  ও জিঙে সবজি


  আপনি যদি কখনো গ্রাম বাংলায় যান তবে অনেক কৃষকের বাড়ীর আঙিনায় এরকম সুন্দর হলুদ রঙের ঝিঙ্গে ফুল গুলো দেখতে পাবেন।যা দেখতে খুব সুন্দর ও মনোহর।এই মনোহর জিঙ্গে ফুল নিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন-

ঝিঙে ফুল
কাজী নজরুল ইসলাম

ঝিঙে ফুল! ঝিঙে ফুল!
সবুজ পাতার দেশে ফিরোজিয়া ফিঙে-কুল-
ঝিঙে ফুল।

গুল্মে পর্ণে
লতিকার কর্ণে
ঢলঢল স্বর্ণে
ঝলমল দোলে দুল-
ঝিঙে ফুল।।

পাতার দেশের পাখি বাঁধা হিয়া বোঁটাতে,
গান তব শুনি সাঁঝে তব ফুটে ওঠাতে।

পউষের বেলা শেষ
পরি, জাফরানি বেশ
মরা মাচানের দেশ
ক'রে তোল মশগুল-
ঝিঙে ফুল।।

শ্যামলী মায়ের কোলে সোনামুখ খুকু রে,
আলুথালু ঘুমু যাও রোদে গলা দুকুরে।
প্রজাপতি ডেকে যায়-
'বোঁটা ছিঁড়ে চলে আয়!'
আসমানের তারা চায়-
'চ'লে আয় এ অকূল!'
ঝিঙে ফুল।।
ঝিঙে ফুল নিয়ে সুন্দর একটি গান আছে।গানের কলিগুলো এমন-
তুমি বল-'আমি হায়
ভালোবাসি মাটি-মা'য়,
চাই না ও অলকায়-
ভালো এই পথ-ভুল!'
ঝিঙে ফুল।।

জিঙ্গে ফুল হতে যে ফল তার নাম জিঙ্গে।
উদ্ভিদের নাম : ঝিঙ্গা Jhinga

স্থানীয় নাম : এর সংস্কৃত নাম ধারা কোষাতকী, বাংলা নাম ঝিঙ্গা বা ঝিঙ্গে, হিন্দীতে ঝিমানি ও তামিলে ভেরিবিরা নামে পরিচিত
ভেষজ নাম : Luffa, acutangula Roxb
ফ্যামিলিঃ- Cucurbitaceae
ব্যবহার্য অংশ : পাতা, ফল, বীজ ও মূল
রোপনের সময় : সাধারনতঃ বাংলায় ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বীজ পোতা হয়, এছাড়া ঋতুর তারতম্য ভেদে অন্য মাসেও এই সবজ্জীর চাষ হয়।
উত্তোলনের সময় : চাষের ৬০-৭৫ দিনের মধ্যে
আবাদী/অনাবাদী/বনজ : আবাদি সব্জী। এর কচি ফলই তরকারী হিসেবে ব্যবহৃত হয়
চাষের ধরণ : আবাদি সব্জী।
পরিচিতি: বর্ষজীবী লতাগাছ কিন্তু কোণ বিশিষ্ট, মসৃণ গাঁট থেকে নুতন কান্ড বের হয় ও পরিনত সময়ে ফুল ও ফল হয়, লতাটি আকর্ষি যুক্ত, (সাধারনত) বেড়ায় গায়ে, মাচায় ও অন্য গাছকে আশ্রয় করে বেড়ে উঠে।সাধারনত স্ত্রী পুরুষ ভেদে লাউ কুমড়োর মত দুই রকমের ফুল হয়। স্ত্রী জাতীয় ফুল থেকেই ফল হয়। ফুলের বর্ণ ঈষৎ হলদে। সন্ধ্যার পূর্বে ফুল ফোটে। সবুজ বর্ণের ফল বোঁটার দিক থেকে ক্রমশঃ মোটা এবং শিরতোলা, এজন্য এর নাম ধারা কোষাতকী। ফলের অভ্যন্তরস্থ প্রকোষ্ঠগুলি যেন জাল বুনে তৈরী। সেটা দেখা যায় ফল পাকলে। প্রকোষ্ঠের মধ্যে অনেকগুলি বীজ থাকে। এগুলি দেখতে অনেকটা ডিম্বাকৃতি ও চেপ্টা। এর কচি ফলই তরকারী হিসেবে ব্যবহৃত হয়।বাংলাদেশ ও ভারতের সর্ব প্রদেশেই কমবেশী এর চাষ হয় ।

ঝিঙ্গের ঔষধি গুনাগুন :
ঝিঙ্গা আর ধুন্দুলের (চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় পরুল) ব্যতিক্রম নয়। অন্য দিকে ঝিঙ্গা আর ধুন্দুলের ভেষজ গুণের কথা বলতে গেলেই যকৃৎ ও প্লীহার (কলজে আর পিলে) কথা এসে যায়।

ফলের রস স্বাদে মধুর, শীতগুন সম্পন্ন, পিত্ত প্রশমক, ক্রিমিনাশক, ক্ষুধা বর্ধক ও বেদনাশক।
ঔষাধার্থ প্রয়োগ ; পাতা ক্ষুধাবর্ধক, পিত্ত প্রশমক, মূত্রকারক, প্লীহারোগে, রক্তস্রাবে ও কুষ্ঠ রোগে হিতকর। পাতার রস শিশুদের চোখে দিলে চোখের যন্ত্রনার উপশম হয়।
ফল ক্রিমির উপদ্রবে হিতকর। পিত্তপ্রশমক, হাঁপানি ও কাসিতে ব্যবহৃত হয়।
বীজ মৃদুবিরেচক ও বমনকারক। অতিসার রোগেও এর ব্যবহার দৃষ্ট হয়।
মূলের ছাল কারো কারো মতে গর্ভস্রাব কারক, বিরেচক, মূত্রকারক ও বিষদোষ নাশক।
১। শোথের মুত্রাল্পতায়ঃ- হৃদরোগ, যকৃৎগত রোগ বা অন্যান্য কারণে শোথ হয়; তাতে প্রস্রাবের মুত্রাল্পতা হয়। সে সময় কাঁচা ঝিঙ্গা ও এর পাতার রস অথবা যেকোনো একটার রস নিয়ে একটু গরম করে রাখতে হবে। সে রস থেকে দুই চা চামচ করে ২ ঘণ্টা পর পর তিন-চারবার আধা কাপ পানির সাথে মিশিয়ে পান করতে হবে। তবে শুধু পাতার রস হলে দুইবার খাবে ও ঝিঙ্গা ফলের রস চারবার দেয়া যাবে। ক’দিন এভাবে খেলে ধীরে ধীরে শোথ ও মূত্রকৃচ্ছ্রতা, সে সাথে মূত্রস্বল্পতার উপশম হবে।
২। মাথার যন্ত্রনায় (শেলষ্মাজনিত):- ঝিঙ্গে ফলের রস (পাকা নয়) ২/৩ ফোটা করে নাকে টেনে নিলে এবং সেই সঙ্গে ২ চা চামচ করে রস খেলে (একটু গরম করে ৭/৮ চা চামচ জল মিশিয়ে) শ্লেষ্মা বেরিয়ে গিয়ে যন্ত্রনাটা কমে যাবে।
৩। বমনেচ্ছায়ঃ- চাপা অম্বল, প্রায় গা বমি করা, সেই ক্ষেত্রে পাকা ঝিঙ্গে বীজ বেটে (৩/৪টি) এক কাপ জলে গুলে খেতে হয়। যদি পেটে বায়ু থাকে সেটাও কমে যাবে। বমনেচ্ছাটাও থাকবে না, তবে ওটা বেটে জলে গুলে ন্যাকড়ায় ছেকে নিতে হবে। তবে ঝিঙ্গে যদি তেতো (তিক্ত) হয়, তাহলে তার বীজ বেটে খেলে বমন হয়। সুতরাং যাদের শরীর দুর্বল, কিংবা বৃদ্ধ, বালক, গর্ভিনী, হৃদরোগে আক্রান্ত এমন রোগীকে এটা খাওয়ানো সমীচীন হবে না।
৪। কুষ্ঠরোগেঃ- আয়ুর্বেদের দৃষ্টিতে এটাকে ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন দাদকে বলা হয়েছে ক্ষুদ্র কুষ্ঠ। যদি দেখা যায় কিছুতেই কিছু হচ্ছে না অথবা চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে ঝিঙ্গে পাতার রস এক দেড় চামচ প্রত্যহ সকালে ও বৈকালে একটু জল মিশিয়ে খেতে হবে। আর কুষ্ঠের রুপ যেখানে প্রকাশ পেয়েছে সেখানে ওই পাতার রস লাগাতে হবে। এই ভাবে অন্ততঃ ২ মাস প্রত্যহ খেতে হবে, তাতে এ থেকে কিছুটা পরিত্রান পাওয়া যাবে।
৫। অর্শের রক্ত পড়ায়ঃ- একে রক্তার্শ ও বলা হয়। রক্ত পড়ে, তার সঙ্গে যন্ত্রনা। এক্ষেত্রে কচিও নয় আবার বুড়োও নয় এই রকম ঝিঙ্গে কুচি কুচি করে কেটে রৌদ্রে শুকিয়ে তাকে গুড়ো করে নিতে হবে এবং কাপড়ে বা চালু নিতে ছেকে ওই গুড়ো ১ গ্রাম মাত্রায় আধ কাপ গরম জলে মিশিয়ে প্রত্যহ সকালে ও বৈকালে দুবার করে খেতে হবে। এটা দৈব ঔষদ বলে প্রচলিত।
৬। চোখে পিঁচুটি ও জুড়ে যেতে থাকলে- (এটা শ্লেষ্মাবিকার থেকেই হয় আবার ঠান্ডা লেগেও হয়।) ওই সময় ঝিঙের কচি পাতার রস গরম করে ঠান্ডা হলে সেটা চোখে দিতে হবে।
৭। পাথুরী : ঝিঙ্গা লতার শিকড় (আকশী) গরুর দুধে বা ঠাণ্ডা পানিতে মেড়ে পর পর তিন দিন খেলে পাথুরী দূর হয়।

৮।শোথোদর : ধুন্দুলের পাতার রস বড় চামচে দুই চামচ পান করলে ও পাতা বেঁটে পেটের ফোলা অংশের ওপর লাগালে এ রোগ সারে।
৯।নালী ঘা : তেতো ঝিঙ্গার রস নালী ঘায়ে লাগালে ঘা শুকিয়ে যায়।

ঝিঙ্গার স্বাস্থ্য উপকারিতা
প্রতি এক কাপ বা ২২৭ গ্রাম খাদ্য উপযোগী ঝিঙ্গায় পাবেন আমিষ ২.২ গ্রাম, জলীয় অংশ ২১৪.৭ গ্রাম, খাদ্য আঁশ ৩ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৪১ কিলোক্যালরি, শর্করা ৯.৪ গ্রাম, চিনি ৩.৯ গ্রাম, ফ্যাট ২২৭ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ ১২৫৮ আইইউ, ভিটামিন সি ৯.২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ই মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৭১ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ৫২৪ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৩২৫ মিলিগ্রাম, জিংক ৪৬৫ মাইক্রোগ্রাম। ঝিঙ্গায় থাকা এসব উপাদান আমাদের শরীরের অনেক উপকার করে থাকে। নানা রোগ থেকে রক্ষা করাসহ রোগপ্রতিরোধে শক্তিশালী করে তোলে। আসুন জেনে নেয়া যাক ঝিঙ্গার কিছু উপকার সম্পর্কে।

১। ঝিঙ্গায় থাকা খাদ্যশক্তি আপনার দেহের দূর্বলতা কাটিয়ে প্রয়োজনীয় শক্তি যোগাতে সাহায্য করে।

২। ঝিঙ্গায় থাকা পর্যাপ্ত পরিমাণে জলীয় অংশ দেহের পানিশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।

৩। এতে থাকা ভিটামিন সি এন্টিঅক্সিডেন্টকে শক্তিশালী করে। রোগ প্রতিরোধে দেহকে শক্তিশালী করে তোলে। এমনকি ক্যানসারের জীবানু প্রতিরোধেও সাহায্য করে।

৪। পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্যআঁশ থাকায় হজমে সহায়তা করে। গ্যাসের সমস্যাও দূর করতে সাহায্য করে।

৫। ঝিঙ্গা রক্তে প্রবাহিত ক্ষতিকর কোলেস্টরেল দূর করতে সাহায্য করে।

৬। নিয়মিত ঝিঙ্গা খেলে আপনার লিভার সুরক্ষিত থাকবে।

৭। ঝিঙ্গায় উপস্থিত ভিটামিন এ এবং সি এর উপস্থিতি শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান বের করে দিতে সহায়তা করে।

৮। ঝিঙ্গায় থাকা ফোলেট হার্ট অ্যাটাক রোধেও সাহায্য করে।

৯। আয়ুর্বেদ মতে ঝিঙ্গা শীতল, মধুর, পিত্তনাশক, ক্ষুধাবর্ধক।

১০। এটি শ্বাসের কষ্ট অর্থাৎ হাঁপানি, জ্বর, কাশি ও কৃমিরোগ উপশম করে।

১১। পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্যআঁশ সমৃদ্ধ ঝিঙ্গা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ও পেট পরিষ্কার করে।

১২। প্রায়ই বমি বমি হলে ঝিঙ্গার পাকা বীজ তিন-চারটা নিয়ে বেঁটে এক কাপ পানি দিয়ে গুলে খেলে উপকার পাবেন ।

ঝিঙ্গে একটি উপকারী সবজি।

No comments:

Post a Comment

Monday, November 9, 2015

কাজী নজরুল ইসলামের এর কবিতা ‘ঝিঙে ফুল’-Bangla Kobita ও জিঙে সবজি



কাজী নজরুল ইসলামের এর কবিতা ‘ঝিঙে ফুল’-Bangla Kobita  ও জিঙে সবজি


  আপনি যদি কখনো গ্রাম বাংলায় যান তবে অনেক কৃষকের বাড়ীর আঙিনায় এরকম সুন্দর হলুদ রঙের ঝিঙ্গে ফুল গুলো দেখতে পাবেন।যা দেখতে খুব সুন্দর ও মনোহর।এই মনোহর জিঙ্গে ফুল নিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন-

ঝিঙে ফুল
কাজী নজরুল ইসলাম

ঝিঙে ফুল! ঝিঙে ফুল!
সবুজ পাতার দেশে ফিরোজিয়া ফিঙে-কুল-
ঝিঙে ফুল।

গুল্মে পর্ণে
লতিকার কর্ণে
ঢলঢল স্বর্ণে
ঝলমল দোলে দুল-
ঝিঙে ফুল।।

পাতার দেশের পাখি বাঁধা হিয়া বোঁটাতে,
গান তব শুনি সাঁঝে তব ফুটে ওঠাতে।

পউষের বেলা শেষ
পরি, জাফরানি বেশ
মরা মাচানের দেশ
ক'রে তোল মশগুল-
ঝিঙে ফুল।।

শ্যামলী মায়ের কোলে সোনামুখ খুকু রে,
আলুথালু ঘুমু যাও রোদে গলা দুকুরে।
প্রজাপতি ডেকে যায়-
'বোঁটা ছিঁড়ে চলে আয়!'
আসমানের তারা চায়-
'চ'লে আয় এ অকূল!'
ঝিঙে ফুল।।
ঝিঙে ফুল নিয়ে সুন্দর একটি গান আছে।গানের কলিগুলো এমন-
তুমি বল-'আমি হায়
ভালোবাসি মাটি-মা'য়,
চাই না ও অলকায়-
ভালো এই পথ-ভুল!'
ঝিঙে ফুল।।

জিঙ্গে ফুল হতে যে ফল তার নাম জিঙ্গে।
উদ্ভিদের নাম : ঝিঙ্গা Jhinga

স্থানীয় নাম : এর সংস্কৃত নাম ধারা কোষাতকী, বাংলা নাম ঝিঙ্গা বা ঝিঙ্গে, হিন্দীতে ঝিমানি ও তামিলে ভেরিবিরা নামে পরিচিত
ভেষজ নাম : Luffa, acutangula Roxb
ফ্যামিলিঃ- Cucurbitaceae
ব্যবহার্য অংশ : পাতা, ফল, বীজ ও মূল
রোপনের সময় : সাধারনতঃ বাংলায় ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বীজ পোতা হয়, এছাড়া ঋতুর তারতম্য ভেদে অন্য মাসেও এই সবজ্জীর চাষ হয়।
উত্তোলনের সময় : চাষের ৬০-৭৫ দিনের মধ্যে
আবাদী/অনাবাদী/বনজ : আবাদি সব্জী। এর কচি ফলই তরকারী হিসেবে ব্যবহৃত হয়
চাষের ধরণ : আবাদি সব্জী।
পরিচিতি: বর্ষজীবী লতাগাছ কিন্তু কোণ বিশিষ্ট, মসৃণ গাঁট থেকে নুতন কান্ড বের হয় ও পরিনত সময়ে ফুল ও ফল হয়, লতাটি আকর্ষি যুক্ত, (সাধারনত) বেড়ায় গায়ে, মাচায় ও অন্য গাছকে আশ্রয় করে বেড়ে উঠে।সাধারনত স্ত্রী পুরুষ ভেদে লাউ কুমড়োর মত দুই রকমের ফুল হয়। স্ত্রী জাতীয় ফুল থেকেই ফল হয়। ফুলের বর্ণ ঈষৎ হলদে। সন্ধ্যার পূর্বে ফুল ফোটে। সবুজ বর্ণের ফল বোঁটার দিক থেকে ক্রমশঃ মোটা এবং শিরতোলা, এজন্য এর নাম ধারা কোষাতকী। ফলের অভ্যন্তরস্থ প্রকোষ্ঠগুলি যেন জাল বুনে তৈরী। সেটা দেখা যায় ফল পাকলে। প্রকোষ্ঠের মধ্যে অনেকগুলি বীজ থাকে। এগুলি দেখতে অনেকটা ডিম্বাকৃতি ও চেপ্টা। এর কচি ফলই তরকারী হিসেবে ব্যবহৃত হয়।বাংলাদেশ ও ভারতের সর্ব প্রদেশেই কমবেশী এর চাষ হয় ।

ঝিঙ্গের ঔষধি গুনাগুন :
ঝিঙ্গা আর ধুন্দুলের (চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় পরুল) ব্যতিক্রম নয়। অন্য দিকে ঝিঙ্গা আর ধুন্দুলের ভেষজ গুণের কথা বলতে গেলেই যকৃৎ ও প্লীহার (কলজে আর পিলে) কথা এসে যায়।

ফলের রস স্বাদে মধুর, শীতগুন সম্পন্ন, পিত্ত প্রশমক, ক্রিমিনাশক, ক্ষুধা বর্ধক ও বেদনাশক।
ঔষাধার্থ প্রয়োগ ; পাতা ক্ষুধাবর্ধক, পিত্ত প্রশমক, মূত্রকারক, প্লীহারোগে, রক্তস্রাবে ও কুষ্ঠ রোগে হিতকর। পাতার রস শিশুদের চোখে দিলে চোখের যন্ত্রনার উপশম হয়।
ফল ক্রিমির উপদ্রবে হিতকর। পিত্তপ্রশমক, হাঁপানি ও কাসিতে ব্যবহৃত হয়।
বীজ মৃদুবিরেচক ও বমনকারক। অতিসার রোগেও এর ব্যবহার দৃষ্ট হয়।
মূলের ছাল কারো কারো মতে গর্ভস্রাব কারক, বিরেচক, মূত্রকারক ও বিষদোষ নাশক।
১। শোথের মুত্রাল্পতায়ঃ- হৃদরোগ, যকৃৎগত রোগ বা অন্যান্য কারণে শোথ হয়; তাতে প্রস্রাবের মুত্রাল্পতা হয়। সে সময় কাঁচা ঝিঙ্গা ও এর পাতার রস অথবা যেকোনো একটার রস নিয়ে একটু গরম করে রাখতে হবে। সে রস থেকে দুই চা চামচ করে ২ ঘণ্টা পর পর তিন-চারবার আধা কাপ পানির সাথে মিশিয়ে পান করতে হবে। তবে শুধু পাতার রস হলে দুইবার খাবে ও ঝিঙ্গা ফলের রস চারবার দেয়া যাবে। ক’দিন এভাবে খেলে ধীরে ধীরে শোথ ও মূত্রকৃচ্ছ্রতা, সে সাথে মূত্রস্বল্পতার উপশম হবে।
২। মাথার যন্ত্রনায় (শেলষ্মাজনিত):- ঝিঙ্গে ফলের রস (পাকা নয়) ২/৩ ফোটা করে নাকে টেনে নিলে এবং সেই সঙ্গে ২ চা চামচ করে রস খেলে (একটু গরম করে ৭/৮ চা চামচ জল মিশিয়ে) শ্লেষ্মা বেরিয়ে গিয়ে যন্ত্রনাটা কমে যাবে।
৩। বমনেচ্ছায়ঃ- চাপা অম্বল, প্রায় গা বমি করা, সেই ক্ষেত্রে পাকা ঝিঙ্গে বীজ বেটে (৩/৪টি) এক কাপ জলে গুলে খেতে হয়। যদি পেটে বায়ু থাকে সেটাও কমে যাবে। বমনেচ্ছাটাও থাকবে না, তবে ওটা বেটে জলে গুলে ন্যাকড়ায় ছেকে নিতে হবে। তবে ঝিঙ্গে যদি তেতো (তিক্ত) হয়, তাহলে তার বীজ বেটে খেলে বমন হয়। সুতরাং যাদের শরীর দুর্বল, কিংবা বৃদ্ধ, বালক, গর্ভিনী, হৃদরোগে আক্রান্ত এমন রোগীকে এটা খাওয়ানো সমীচীন হবে না।
৪। কুষ্ঠরোগেঃ- আয়ুর্বেদের দৃষ্টিতে এটাকে ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন দাদকে বলা হয়েছে ক্ষুদ্র কুষ্ঠ। যদি দেখা যায় কিছুতেই কিছু হচ্ছে না অথবা চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে ঝিঙ্গে পাতার রস এক দেড় চামচ প্রত্যহ সকালে ও বৈকালে একটু জল মিশিয়ে খেতে হবে। আর কুষ্ঠের রুপ যেখানে প্রকাশ পেয়েছে সেখানে ওই পাতার রস লাগাতে হবে। এই ভাবে অন্ততঃ ২ মাস প্রত্যহ খেতে হবে, তাতে এ থেকে কিছুটা পরিত্রান পাওয়া যাবে।
৫। অর্শের রক্ত পড়ায়ঃ- একে রক্তার্শ ও বলা হয়। রক্ত পড়ে, তার সঙ্গে যন্ত্রনা। এক্ষেত্রে কচিও নয় আবার বুড়োও নয় এই রকম ঝিঙ্গে কুচি কুচি করে কেটে রৌদ্রে শুকিয়ে তাকে গুড়ো করে নিতে হবে এবং কাপড়ে বা চালু নিতে ছেকে ওই গুড়ো ১ গ্রাম মাত্রায় আধ কাপ গরম জলে মিশিয়ে প্রত্যহ সকালে ও বৈকালে দুবার করে খেতে হবে। এটা দৈব ঔষদ বলে প্রচলিত।
৬। চোখে পিঁচুটি ও জুড়ে যেতে থাকলে- (এটা শ্লেষ্মাবিকার থেকেই হয় আবার ঠান্ডা লেগেও হয়।) ওই সময় ঝিঙের কচি পাতার রস গরম করে ঠান্ডা হলে সেটা চোখে দিতে হবে।
৭। পাথুরী : ঝিঙ্গা লতার শিকড় (আকশী) গরুর দুধে বা ঠাণ্ডা পানিতে মেড়ে পর পর তিন দিন খেলে পাথুরী দূর হয়।

৮।শোথোদর : ধুন্দুলের পাতার রস বড় চামচে দুই চামচ পান করলে ও পাতা বেঁটে পেটের ফোলা অংশের ওপর লাগালে এ রোগ সারে।
৯।নালী ঘা : তেতো ঝিঙ্গার রস নালী ঘায়ে লাগালে ঘা শুকিয়ে যায়।

ঝিঙ্গার স্বাস্থ্য উপকারিতা
প্রতি এক কাপ বা ২২৭ গ্রাম খাদ্য উপযোগী ঝিঙ্গায় পাবেন আমিষ ২.২ গ্রাম, জলীয় অংশ ২১৪.৭ গ্রাম, খাদ্য আঁশ ৩ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৪১ কিলোক্যালরি, শর্করা ৯.৪ গ্রাম, চিনি ৩.৯ গ্রাম, ফ্যাট ২২৭ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ ১২৫৮ আইইউ, ভিটামিন সি ৯.২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ই মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৭১ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ৫২৪ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৩২৫ মিলিগ্রাম, জিংক ৪৬৫ মাইক্রোগ্রাম। ঝিঙ্গায় থাকা এসব উপাদান আমাদের শরীরের অনেক উপকার করে থাকে। নানা রোগ থেকে রক্ষা করাসহ রোগপ্রতিরোধে শক্তিশালী করে তোলে। আসুন জেনে নেয়া যাক ঝিঙ্গার কিছু উপকার সম্পর্কে।

১। ঝিঙ্গায় থাকা খাদ্যশক্তি আপনার দেহের দূর্বলতা কাটিয়ে প্রয়োজনীয় শক্তি যোগাতে সাহায্য করে।

২। ঝিঙ্গায় থাকা পর্যাপ্ত পরিমাণে জলীয় অংশ দেহের পানিশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।

৩। এতে থাকা ভিটামিন সি এন্টিঅক্সিডেন্টকে শক্তিশালী করে। রোগ প্রতিরোধে দেহকে শক্তিশালী করে তোলে। এমনকি ক্যানসারের জীবানু প্রতিরোধেও সাহায্য করে।

৪। পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্যআঁশ থাকায় হজমে সহায়তা করে। গ্যাসের সমস্যাও দূর করতে সাহায্য করে।

৫। ঝিঙ্গা রক্তে প্রবাহিত ক্ষতিকর কোলেস্টরেল দূর করতে সাহায্য করে।

৬। নিয়মিত ঝিঙ্গা খেলে আপনার লিভার সুরক্ষিত থাকবে।

৭। ঝিঙ্গায় উপস্থিত ভিটামিন এ এবং সি এর উপস্থিতি শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান বের করে দিতে সহায়তা করে।

৮। ঝিঙ্গায় থাকা ফোলেট হার্ট অ্যাটাক রোধেও সাহায্য করে।

৯। আয়ুর্বেদ মতে ঝিঙ্গা শীতল, মধুর, পিত্তনাশক, ক্ষুধাবর্ধক।

১০। এটি শ্বাসের কষ্ট অর্থাৎ হাঁপানি, জ্বর, কাশি ও কৃমিরোগ উপশম করে।

১১। পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্যআঁশ সমৃদ্ধ ঝিঙ্গা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ও পেট পরিষ্কার করে।

১২। প্রায়ই বমি বমি হলে ঝিঙ্গার পাকা বীজ তিন-চারটা নিয়ে বেঁটে এক কাপ পানি দিয়ে গুলে খেলে উপকার পাবেন ।

ঝিঙ্গে একটি উপকারী সবজি।

No comments:

Post a Comment