ইবনে বতুতার রোমাঞ্চকর অভিযান
আন্দালুসিয়ায় ইবনে বতুতা
সুলতানের সহচর্যে কিছুদিন থেকে পিতা মাতার কবর জিয়ারতের জন্য তানজা শহরে এলাম।কবর জিয়ারত শেষে আত্মীয় স্বজনের সাথে কিছুদিন কাটিয়ে সাবতাহ শহরে পৌঁছলাম।সাবতাহ শহরে এসে অসুখে পড়লাম।মাস তিনেক পর সুস্থ হয়ে ভাবলাম আমারতো এখন শক্তি সামর্থ্য আছে ।জেহাদে যা্ওয়া কর্তব্য।তখন আন্দালুসিয়ার সুলতানের সাথে ইউরোপীয় খ্রিষ্টানদের প্রায়ই যুদ্ধ বিগ্রহ লেগে থাকে।ভাবলাম এইসব যুদ্ধে আমিও অংশ নিতে পারি।তাই আন্দালুসিয়া যাওয়ার নিয়ত করে সাবাতাহ থেকে একটি জাহাজে চড়ে জবলুকতারিক (জিব্রাল্টার)এসে পৌঁছলাম।আমার এই সফরটা ছিল ষষ্ঠ আলকোলস এর এর মৃত্যেুর পর।রোমের এই অধিপতি জিব্রাল্টার অবরোধ করে রেখেছিলেন।কিন্তু বিজয় লাভের আগেই কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।জিব্রাল্টার ছোট অথচ সুন্দর শহর।এখানে বিশিষ্ট ব্যক্তি খতিব আবু জাকারিয়া রুনদাই ও কাজী ইসা বারবারির সাথে দেখা হলো।কাজী তাঁর বাড়ীতে আমার থাকার ব্যবস্থা করলেন।জিব্রাল্টারে আমাদের সুলতান আনানের সহায়তায় বেশ কিছু ভবন নির্মীত হয়েছে।সেগুলো ঘুরে ফিরে দেখলাম।জিব্রাল্টরি কয়েকদিন থেকে গেলাম রোনদাহ।আন্দালুসিয়ায় মোসলমানদের সবচেয়ে শক্তিশলিী ঘাঁটি হলো এই রোনদাহ।এখানে একটি বিশাল দুর্গ আছে।শহরের অধিনায়ক আব্দুল রাব্বি সোলায়মান বিন দাউদ আসকারি।কাজী ছিলেন আমার চাচাত ভাই ফকিহ আব্দুর কাশেম মুহাম্মদ বিন বতুতা।আমি বর্তমান কাজী আবুল হাজ্জাজ ইউসুফের বাড়ীতে মেহমান হলাম।
রোনদাই শহরের প্রাকৃতিক দৃশ্য খুব সুন্দর।বাগ-বাগিচায় পূর্ণ।চারপাশে সবুজের সমারোহ।আবহাওয়াও মনোরম আরামদায়ক।এখানে পাঁচদিন কাটিয়ে গেলাম মারবালা শহরে।রোনদাই থেকে মারবালা পর্যন্ত পথটা পাহাড়ী এবং দুর্গম।এখানে এসে দেখলাম একদল সোওয়ারি মারবালার দিকে যাচ্ছে।আমিও তাদের সাথে যাওয়ার জন্য পিছু পিছু রওয়ানা হলাম।ওদের থেকে আমি অনেক আগে চল এলাম।মারবালার এলাকা পার হয়ে সোহাইল এলাকায় এসে একটি খাদে এক ঘোড়াকে পড়ে থাকতে দেখলাম।তারপর দেখলাম একটি মাছের কুড়িও মাটিতে পড়ে আছে।এতে আমার সন্দেহ হলো সামনে নিশ্চই কোন অঘটন ঘটেছে।এখানে একটি ওয়াচ টাওয়ারও দেখতে পেলাম।এই টাওয়ারে সতর্ক প্রহরী থাকেন।দূর থেকে দুশমনদের কোন আলামত পেলে সতর্ক সংকেত দেন।আমি বিপদের আভাস পেয়ে পিছিয়ে এসে সাথীদের সাথে মিলিত হলাম।ওখানে সোহাইল দুর্গের অধিনায়কও প্রহরীরদের নিয়ে এসেছিলেন।জানা গেল দুমমনরা চারটি নৌকা করে ওখানে এসেছিল।ওয়াচ টাউয়ারের প্রহরী তখন সেখানে না থাকায় আগে থেকেই সতর্ক সংকেত দিতে পারেননি।মারবালা থেকে বারো জন সওয়ারি ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন।দুশমনরা অতর্কিতে তাদের হামলা করে এক জনকে হত্যা করে এবং দশ জনকে বন্দী করে নিয়ে যায় ।এক জন পালিয়ে আসতে সক্ষম হন।এছাড়া একজন জেলেও ওদের হাতে নিহত হয়।যে মাছের কুড়িটি পড়ে থাকতে দেখেছি সেটি ওই জেলেরই ।
সেদিন সোহাইল দুর্গেই আমরা রাত কাটালাম।পরদিন দুর্গের অধিনায়ক পাহারা দিয়ে আমাদেরকে মালাকা শহরে পৌঁছে দিলেন।আন্দালুসিয়ার এক সুন্দর শহর এই মালাকা।শহরটি সমুদ্রতীরে অবস্থিত।এখানকার ফলমূলের খ্যাতি বিশ্বজোড়া।প্রচুর আঙুর জন্মে এখানে।বাজারে প্রতি আট রতল আঙুর এক দিরহামে বিক্রী হয়।মালাকার ইয়াকুতি আনার দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ আনার।এগুলো বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে রফতানী হয়,এছাড়া আনজির ও বাদামও এখানে প্রচুর জন্মে।মালাকার আরেকটি রপ্তানী পণ্য হলো বিভিন্ন প্রকার স্বর্ণ পাত্র।বিদেশে এগুলো রপ্তানী হয়।মালাকার মসজিদ অত্যন্ত সুন্দর এবং কমলা বাগানে সজ্জিত।
শহরে এসে দেখলাম কাজী আবু আবদুল্লাহ বিন আবু জাফর শহরের গণ্যমান্য লোকদের নিয়ে মজলিশে চাঁদা উঠাচ্ছেন।জিজ্ঞেস করে জানতে পাররাম কাফেরদের হাত থেকে পূর্বোল্লেখিত মুসলমান বন্দীদের মুক্তিপনের টাকা উঠানো হচ্ছে।খ্রিষ্টানরা প্রায়ই সুযোগ পেয়ে অতর্কিতে হামলা করে অসহায় মুসলিম পথচারীদের ধরে নিয়ে যায় এবং মুক্তিপণ দাবি করে।
মালাকার খতিব আবু আবদুল্লাহ সাহেলীর বাড়ীতে মেহমান হয়ে কিছুদিন থেকে আমরা বাল্লাকা শহরে এলাম।মালাকা থেকে এর দূরত্ব চব্বিশ মাইল।মালাকার মতো এখানেও আনজির আঙুর প্রচুর জন্মে।এখানকার মসজিদটিও সুন্দর।
বাল্লাকা থেকে এলাম আরেক শহর হাম্মাহতে্।এটিও সুন্দর তবে আকারে ছোট।শহর থেকে মাইল খানেক তফাতে একটি নদীর তীরে অদ্ভুত আকৃতির একটি মসজিদ আছে।এখানে গরম পানির প্রস্রবণ আছে।এর পাশে দুটি রেষ্ট রুম।একটি পূরুষদের জন্য আরেকটি নারীদের জন্য।গরম পানি দিয়ে এখানে ওজু গোসল করা যায়।
কর্টেসী-মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ