বাংলাদেশের সংবিধানের সংশোধনীসমূহ
১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে ২০১১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের সংবিধানে ১৫টি সংশোধনী আনা হয়েছে। সংবিধানের সংশোধনীসমূহ নিম্নে তুলে ধরা হলো।১।প্রথম সংশোধনী
সংবিধানের প্রথম সংশোধনী আনা হয় ১৯৭৩ সালের জুলাই মাসে। এ সংশোধনীর মাধ্যমে ৪৭ অনুচ্ছেদে দুটি নতুন উপধারা সংযোজন করা হয়। এ সংশোধনীর মূল কারণ ছিল গণহত্যাজনিত অপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ও আন্তর্জাতিক আইনের অধীন অন্যান্য অপরাধের জন্য আইন তৈরি করা ও তা কার্যকর করা।
২।দ্বিতীয় সংশোধনী
১৯৭৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর আনা হয় দ্বিতীয় সংশোধনী। যার মাধ্যমে সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদে (২৬, ৬৩, ৭২ ও ১৪২) সংশোধন আনা হয়। নিবর্তনমূলক আটক, জরুরি অবস্থা ঘোষণা এবং এ সময় মৌলিক অধিকারগুলো স্থগিতকরণ সম্পর্কে সংবিধানে কোনো বিধান ছিল না। এ সংশোধনীর মাধ্যমে এই বিধানগুলো সংযোজন করা হয়।
৩।তৃতীয় সংশোধনী
১৯৭৪ সালের ২৮ নভেম্বর তৃতীয় সংশোধনী আনা হয়। মূলত ভারত ও বাংলাদেশের সীমানা নির্ধারণী একটি চুক্তি বাস্তবায়ন করার জন্য এই সংশোধনী আনা হয়।
ভারতের কিছু অংশ বাংলাদেশে আসবে এবং বাংলাদেশের কিছু অংশ ভারতে যাবে- এ চুক্তি বাস্তবায়নের জন্যই তৃতীয় সংশোধনী আনা হয়।
৪।চতুর্থ সংশোধনী
এই সংশোধনী একটি মৌলিক সংশোধনী। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি এ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশের শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটানো হয়। চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমেই সংসদীয় পদ্ধতি পরিবর্তন করে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা চালু করা হয়; এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা ‘বাকশাল’ প্রবর্তন; রাষ্ট্রপতি ও সংসদের মেয়াদ বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রপতির অপসারণ পদ্ধতি জটিল করা; সংসদকে একটি ক্ষমতাহীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়; মৌলিক অধিকার বলবৎ করার অধিকার বাতিল করা; বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করা ও উপ-রাষ্ট্রপতির পদ সৃষ্টি করা হয়।
৫।পঞ্চম সংশোধনী
জাতীয় সংসদে এ সংশোধনী আনা হয় ১৯৭৯ সালের ৬ এপ্রিল। এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের কোনো বিধান সংশোধন করা হয়নি। এ সংশোধনী ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টে সামরিক শাসন জারির পর থেকে ৬ এপ্রিল ১৯৭৯ পর্যন্ত সামরিক শাসনামলের সব আদেশ, ঘোষণা ও দন্ডাদেশ বৈধ বলে অনুমোদন করে।
৬।ষষ্ঠ সংশোধনী
১৯৮১ সালের ১০ জুলাই এ সংশোধনী আনা হয়। এতে উপ-রাষ্ট্রপতির পদ না থাকা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিধান যুক্ত করা হয়।
৭।সপ্তম সংশোধনী
১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর জাতীয় সংসদে সপ্তম সংশোধনী আনা হয়। এ সংশোধনীর মাধ্যমে সামরিক শাসনামলে জারি করা সব আদেশ, আইন ও নির্দেশকে বৈধতা দেওয়া হয় এবং আদালতে এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন না করার বিধান করা হয়। এ সংশোধনীতে বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা ৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ২৬ আগস্ট এ সংশোধনী আদালতে কর্তৃক অবৈধ ঘোষিত হয়।
৮।অষ্টম সংশোধনী
১৯৮৮ সালের ৯ জুন সংবিধানে অষ্টম সংশোধনী আনা হয়। এ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ২, ৩০, ৬৮ ও ১০০ অনুচ্ছেদের পরিবর্তন আনা হয়। এ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বলে ঘোষণা করা হয়। হাইকোর্টবিভাগের ৬টি স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন করা হয়,
৯।নবম সংশোধনী
নবম সংশোধনী আনা হয় ১৯৮৯ সালের ১১ জুলাই। এ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে কিছু বিধান সংযোজন করা হয়।
১০।দশম সংশোধনী
১৯৯০ সালের ১২ জুন দশম সংশোধনী পাস করা হয়। মহিলাদের জন্য আসন ১৫ থেকে ৩০ বাড়ানো হয়।
১১।একাদশ সংশোধনী
১৯৯১ সালে এ সংশোধনী পাস হয়। এর মাধ্যমে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদের উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগদান বৈধ ঘোষণা করা হয়। এতে আরো বলা হয়, নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর এ উপ-রাষ্ট্রপতি দেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারবেন এবং উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার কর্মকাল বিচারপতি হিসেবে বলে গণ্য হবে।
১২।দ্বাদশ সংশোধনী
এটি মৌলিক সংশোধনী। ১৯৯১ সালের এ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৭ বছর পর দেশে পুনরায় সংসদীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৩।ত্রয়োদশ সংশোধনী
১৯৯৬ সালের ২৬ মার্চ এ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করা হয়।
১৪।চতুর্দশ সংশোধনী
২০০৪ সালের ১৬ মে এ সংশোধনী আনা হয়। এ সংশোধনীর মাধ্যমে সংরক্ষিত মহিলা আসন ৩০ থেকে ৪৫ করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অবসরের বয়সীমা ৬৫ থেকে ৬৭ করা হয়।
১৫।পঞ্চদশ সংশোধনী
২০১১ সালের ৩০ জুন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বিল সংসদে গৃহীত হয়। এর মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলোপ করা হয়।
No comments:
Post a Comment