চাঁদনী রাতের ভূত
প্রায় সবাই ভুতে বিশ্বাস করেন।অনেক বলেন ভুত দেখেছেন।অনেকে বলেন দেখেননি
।আমি একবার ভুত দেখেছিলাম।এটি ভুত দর্শনের গল্প।আমার জীবনের ভুত দর্শনের
একটি সত্য গল্প ।
আমি সে সময় মোহনগঞ্জ ডিগ্রী কলেজে অধ্যয়নরত ছিলাম।
একদিন কলেজে গিয়ে দেখলাম ক্লাস শেষে ঠাকুরকোনায় ষাড়ের লড়াই দেখার জন্য
কয়েকজন সহপাঠি সিদ্ধান্ত নিয়েছে।আমাকে জিজ্ঞাসা করলো যাবো কিনা ।ট্রেনে
মোহনগঞ্জ হতে ঠাকুরকোনা ২০/২৫ মিনিটের পথ।৪ টার সময় ট্রেন।দিনান্তে ছটায়
ফিরতি ট্রেন আছে। বাড়ি ফিরাতে সমস্যা হবে না।এক কথায় রাজী হয়ে গেলাম ।
বিকাল ৪ টার ট্রেন ধরে ঠাকুর কোনায় চলে গেলাম ।
সেখানে গিয়ে দেখলাম বিরাট একটি মাঠে অনেক মানুষের ভীরের মধ্যে মাঝ খানে খালি জায়গায় ষাড়ের লড়াই চলছে।
সেখানে জানতে পারলাম এখন ছোট ছোট ষাড়দের লড়াই হচ্ছে পরে বড় ষাড়দের আকর্ষনীয় লড়াই হবে।
সেখানে অনেক অস্থায়ী দোকানপাট গড়ে উঠেছে ।সর্বত্র মেলা মেলা ভাব । যেনো
ষাড়ের লড়াই উপলক্ষে বিশাল মেলার আয়োজন ।দোকানে দোকানে গরম গরম জিলাপী
,সিঙ্গারা ,ডালপুরী ভাজা হচ্ছে ।বাঁশের বেঞ্চ পাতা হয়েছে। বেঞ্চ বসে লোক জন
আয়েশ করে গরম গরস ডালপুরী সিঙ্গারা খাচ্ছে।খিদে পেয়েছিল খুব। আমরা জিলাপী ও
ডালপুরি খেলাম।
এর মধ্যে বড় ষাড়দের লড়াই শুরু হল । সেকী ভিষণ লড়াই,
দেখার মতো !লড়াই দেখাতে মগ্ন হয়ে গেলাম ।লাল একটি সুন্দর ষাড় লড়াই করছে
কালো একটি ষাড়ের সঙ্গে ।মনে মনে লালটাকে সার্পোর্ট করলাম।মানুষ অবচেতন মনে
সুন্দরের পক্ষ নেয় ।যদিও কালোটা দেখতে অসুন্দর ছিল না।বিকালের পড়ন্ত রোদে
লাল ষাড়টার শরীর হতে একটা বাড়তি সৌন্দর্য বিকরিত হচ্ছিল হয়তো এটাই আকর্ষণের
কারণ।লাল রং কি সহজেই মানুষকে আকর্ষণ করে ? তবে রক্তপাত দেখলে মানুষ
উদ্বিগ্ন হয়, আতংকিত হয় । লালটা কালোটাকে শিং দিয়ে টেলে পিছনে নেয়
তো,পরক্ষণে কালোটা লালটাকে পিছনে ঠেলে দেয় ।ষাড়েদের লড়াইয়ে অদ্ভুদ কৌশল
।মাঝে মধ্যে চলে শিং এর গুঁতো দেয়ার চেষ্টা।ষাড়দের অপূর্ব শারীরীক কসরত
।দারুণ উপভোগ্য। এমন সময় দূরে কোথাও ট্রেনের হুইসেলের শব্দ পেলাম ।বন্ধুরা
ট্রেন আসার কথা বলে ষ্টেশনে যাবার তাগিদ দিল।আমি ষাড়ের লড়াইতে এতোটাই
মোহাবিষ্ট মগ্ন ছিলাম যে,খেলার শেষ না দেখে যেতে ইচ্ছে করছিল না
মোটেই।বললাম তোরা যা আমি আসছ্ ।সহপাঠী কাজল তাড়াতারি চলে আসার তাগিদ দিয়ে
অন্যদের নিয়ে চলে গেল এগিয়ে দেয়ার জন্য ।কাজলের বাড়ি এখানেই ।চিন্তা কি
?ট্রেনের পূনরায় হুইসেলের সাথে সাথেই আমার সমর্থিত লাল রঙের ষাড়টার জয় হলো ।
প্রতিপক্ষের কালো রঙের ষাড়টাকে রনে ভঙ্গ দিয়ে দৌড়ে যেতে দেখে আমিও
ষ্টেশনের দিকে ভোঁ দৌড় দিলাম ।ষ্টেশনে এসে দেখলাম ট্রেন গতি সঞ্চার করে চলে
যাচ্ছে। ট্রেন ফেল করলাম।হুইসেলটি ছিল ট্রেন ছেড়ে যাবার হুইসেল ।কাজলকে
দেখতে পেলাম না।তার বাড়ি এ তল্লাটেই ।সমস্যা হলে তার বাড়ি যাওয়া যেতো
।কিন্তু সে গেলো কই ? হয়তো আমার দেরী দেখে জরুরী কোন কাজে চলে গেছে।কিন্তু
তার থাকা উচিৎ ছিল ষ্টেশনে ।
ছোট রেল ষ্টেশন ঠাকুরকোনা ।চারিদিকে ক্রমশ
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে ।ধীরে ধীরে চারিদিক অন্ধকারের চাদর ডেকে দিচ্ছে চারপাশ
।সে সময় ঠাকুরকোনায় বিদ্যুৎ ছিল না।ষ্টেশন মাষ্টারের ঘরে হারিকেনের মৃদু
আলো জানান দিল য়ে তিনি সেখানে আছেন।তাকে গিয়ে অতি আগ্রহে জিজ্ঞাসা করলাম
পরবর্তী ট্রেন কটায় আসবে জনাব।তিনি নির্লিপ্তভাবে জানালেন পরের ট্রেন দশটায়
আসবে, লেট করলে এগারোটাও বাজতে পারে।হতাশা হলাম।মনে হলো তিনি যেনো চান না
আমি ভালো মতো বাড়ি ফিরি।আসলে ষ্টেশন মাষ্টার যা বলেছেন সেটাই সত্য। সে সময়
ঠাকুরকোনা মোহনগঞ্জের মধ্যে যাতায়াতের জন্য ট্রেন ছাড়া অন্য কোন যানবাহনের
প্রচলন ছিল না। ঠাকুরকোনা মোহনগঞ্জের রাস্তা ছিল কাঁচা এবং ভাঙ্গা ।হঠাৎ
নিজেকে কিছুটা অসহায় মনে হলো।সবে শুরু হওয়া নভেম্বরের মাসের সন্ধ্যা কালীন
শীত শীত ভাবটা একটু বেশী অনুভূত হতে লাগলো । ভাবলাম এই পাড়াগাঁয়ে রাত দশটা
মানে গভীর রাত ।রাত বারটায় মোহনগঞ্জে পৌঁছলে ধর্মপাশার রিক্সা পাওয়া যাবে
তো ?পরক্ষনেই ভাবলাম হেঁটে চলে যাব ,বড় জোর এক দেড় ঘন্টা লাগতে পারে।
কিন্তু চারিদিকে ঘোর অন্ধকার যাবো কি করে?একটি উসকে দেয়া সলতের কুপি বাতির
আলো দৃষ্টিকে আকর্ষণ করলো । উৎসের দিকে চেয়ে দেখলাম সেটি একটি টি ষ্টল
।সামনে তাজা পাকা কলা ঝুলছে,কেতলিতে ফুটন্ত চা,নল দিয়ে উড়ছে উষ্ণ বাস্পের
মেঘ, গরম চা ফুটছে ।সামনে বেঞ্চ পাতা । বেঞ্চে বসে কলা চা আর টোষ্ট খেলাম
।টি ষ্টলের বেঞ্চে বসা একজন লোকের সাথে আলাপ করলাম ।তার নাম করিম মিয়া
।পাশের গ্রামেই থাকেন।করিম মিয়া মোহনগঞ্জ ডিগ্রী কলেজে পড়ুয়া কাজলদের বাড়ি
চিনেন ।তার বাড়ি হতে দুই গ্রামের পরে রহিম মাতাব্বরের বাড়ি ।রহিম
মাতাব্বরের বিরাট অবস্থা ।হালের বলদ জমি জমার অভাব নেই ।গ্রামের সাধারণ
মানুষ গ্রামের ধনী মানুষদের গল্প ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে ভালবাসেন।কিন্তু
বাস্তবতা হলো শহরের সাধারণ ধনী আর গ্রামের বিরাট ধনীর মধ্যে আকাশ পাতাল ফারাক
। সেটা জানেন না গ্রামের সরল মানুষেরা ।
মাতাব্বরের কলেজ পড়ুয়া ছেলের নাম
কাজল। করিম জানালেন রাত দশটার আগে আর কোন ট্রেন নেই।টি ষ্টলে মানুষের মধ্যে
বসে থেকে নিজের সাহস ও শক্তি পেলাম,নাকি গরম চা পান করে সতেজতার
অনুভব,দুটোই হতে পারে ভাবলাম।ভাবলাম কিভাবে মোহনগঞ্জ যাবো ,কাজলদের বাড়ি
যাবো কি ? বাড়িতে মা চিন্তা করবেন না ? বলে আসিনি যে!এমন সময় দেখলাম গাছের
ফাঁক দিয়ে বড় হলদেটে চাঁদ উঠছে।যেনো হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গা রক্ত চক্ষু চাহনী। মনে
হলো চাঁদ নয় যেনো নতুন দিনের আশার আলো দেখলাম।পাশে বসা করিম মিয়ার নিকট
মোহনগঞ্জ যাবার রাস্তাটি জানতে চাইলাম ।তিনি দোকানের পাশে দিয়ে রেল লাইনের
সমান্তরালে চলে যাওয়া কাঁচা রাস্তাটি দেখিয়ে বললেন যে এই রাস্তাটি সোজা
মোহনগঞ্জ গেছে,তবে মাঝে মধ্যে ভাঙ্গা থাকতে পারে,সবে পানি থেকে জেগেছে
রাস্তা ঘাট ।“তবে যেতে পারবেন আশা করি” জানালেন করিম মিয়া।চাঁদনী রাত হেঁটে
যেতে সমস্যা কি !অতএব দোকানের পাওয়া মিটিয়ে করিম নিকট হতে বিদায় নিয়ে
হাঁটতে শুরু করলাম ।যাবার সময় তিনি আল্লাহর নাম নিয়ে শুভ কামনা করলেন।করিম
মিয়া লোকটি ভাল,শুভ কামনা করলো ,নাকি পথে কোন অশুভ কিছু আছে ।গ্রামের
লোকেরা অশুভ অমঙ্গল বিষয়ে সরাসরি বলতে ভয় পায় ,সন্দেহ প্রবণতা উঁকি দিল
মনে।চর্তুদিকে ঝলমলে জোছনা দেখে মনে সন্দেহের কিছু রইল না। ধবধবে মন ভালো
করার মতো সাদা জোৎস্না ।হেঁটে যেতে ভালই লাগছে।কদাচিৎ রাস্তায় এক দুজনকে
দেখা যাচ্ছে ।মানুষের চলচলা আছে ভয়ের কিছু নাই।প্রফুল্ল মনে হাঁটছি। অনেকটা
পথ হেঁটে পিছনে ফেলে আসলাম। হঠাৎ জনশূন্য হয়ে গেল ।আশে পাশে কোর বাড়ি ঘর
নেই ।দিগন্ত বিস্তৃত ধূ ধূ জোছনা ছাড়া কোন জনমানুষের চিহ্ন নেই ।এখানে
গ্রাম গুলো দূরে দূরে ।একটু আগে গ্রামের ভিতর দিয়ে রাস্তা পার হয়ে এসেছি
।সেখানে ছেলে মেয়েদের পড়াশুনার শব্দ শুনতে পেয়েছিলাম।একজন পড়ছিল,-“জোলেখা
বাদশার মেয়ে,তার ভারি অহংকার…” ঐ গ্রামটি কি করিম মিয়ার গ্রাম ছিল ।করিম
মিয়া বিবরণ মতে তাই হবে হয়তো ,কি জানি ?সম্ভবত। ঝিঁ ঝিঁ পোকার শব্দ ছাড়া
কোন শব্দ নাই । হঠাৎ করে মনে হলো রহস্য জনক ভৌতিক পরিবেশের আগমন হয়েছে।এমন
মনে হওয়ার কারণ কি ? আমি কি ভয় পাচ্ছি ? সামনে দেখলাম রাস্তা ভাঙ্গা ,মেটো
পথ চলে গিয়ে হাড়িয়ে গেছে সামনের নিচের ঝাপসা অন্ধকারে । রাস্তার ভাঙ্গা
ঢালু অংশে চলে এলাম । উঁকি দিয়ে দেখলাম নীচটা ছায়াময় কুয়াশার ঝাপসা ছায়া
ছায়া অস্পষ্ট, অন্ধকার !দিগন্তের তীর্যক চাঁদের আলো ভাল মতো পৌঁছেনি
সেখানে। সন্দিগ্ন হলাম,রাস্তা ভাল তো ? যাওয়া যাবে তো !কেন জানি ভাবলাম রেল
লাইন ধরে যাওয়া উচিৎ হবে !মনে পড়ল রেল লাইন ধরে যেতে বারণ করেছিলেন করিম
মিয়া ।কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেছিলেন,গতকাল এক লোক ট্রেনের তলে কাটা পরে
মারা গিয়েছে ।ভাবলাম তার কুসংস্কার মনের বরণ ,নাকি অন্য কিছু ? পরক্ষণেই
ভাবলাম এতাটা পথ পিছনে হেঁটে রেল লাইন ধরে যাওয়াতে কোন মানে হয় না।সামনে
এগিয়ে দেখলাম মেঠো রাস্তাটি একটি জলাশয়ের কিনার দিয়ে আবার ভাঙ্গা রাস্তার
অপর প্রান্তে উঠেছে।চাঁদের আলোতে দেখতে পেলাম অর্ধচন্দ্র মেঠোপথ জলাশয়ের
গাঁ ঘেসে চলে গিয়েছে ভাঙ্গা রাস্তার প্রান্তে ।রাস্তাটি ধনুর মতো বেশ
বাঁকানো ।ভাবলাম সোজা গেলে তাড়াতাড়ি যাওয়া যাবে । সোজা রাস্তা খুঁজতে গিয়ে
দেখলাম সামনে জলা ভূমি, বামে সংলগ্ন কিছুটা উচু ভূমি ।সেখান দিয়ে আনায়াসে
যাওয়া যায় উচুঁ ভূমির উপর দিয়ে যেতে উদ্যত হয়ে থমকে গেলাম । নতুন বাঁশের
খুটি পোতা একটি কবর ।গোরস্তান! হছাৎ গোরস্তান দেখে ভয় পেলাম ।মনে মনে
চিন্তা করলাম গোরস্তানের আত্মাদের শান্তি বিনষ্ট করা যাবে না কিছুতেই।
কবরটি কি আজকের ?কাঁচা বাঁশের একদম নতুন কবর,আজকের হতে পারে । এমন সময়
জলাশয়ে বেশ বড় একটি মাছ হঠাৎ শব্দ করে পানিতে গাঁই দিল।চমকে উঠলাম ।তার পর
নীরব চারিদিকে সুনসান ।কিছুটা ভয় পেলাম ।ভাবলাম ভয় কিসের গোরস্তান পবিত্র
জায়গা।কিন্তু আরো ভয় সামনে অপেক্ষা করছিল জানতাম না আমি।ধনুকবাঁকা মেঠো
রাস্তা পার হলাম কোনোমতে । অপর দিকের ভাঙ্গা প্রান্ত বেয়ে রাস্তায় উঠলাম
।স্বস্থির হাঁফ ছেড়ে হাটতে শুরু করলাম ।আচমকা দৃষ্টি সীমার বেশ খানিকটা
দূরে দেখতে পেলাম একজন সাদাপোষাকধারী লোক এদিকে হেঁটে আসছেন।মানুষের অবয়ব
যে কতোটা প্রাণবন্ত সাদা পোষাকের লোকাটকে দেখে জানলাম।যেনো ধরে প্রাণ ফিরে
এলো । যদিও ঠিক পথেই যাচ্ছি বলে মনে হচ্ছে তবুও ভাবলাম ঠিক পথে যাচ্ছি কিনা
সেটা শুভ্র লেবাসধারীর নিকট হতে জেনে নেয়া দরকার।কিছুক্ষণ হাঁটার পর অবাক
হয়ে দেখলাম সুভ্রলেবাসী ও আমার মধ্যে দূরত্ব কমছে না।তিনি কি আমার মতো একই
দিকে যাচ্ছেন ?এজন্যই দূরত্ব কমছে না ?আমি কি জোরে হেঁটে উনাকে ধরব ?কথা
বলা দরকার উনার সাথে । শুভ্র লেবাসধারীর নিকটবর্তী হওয়ার জন্য জোর কদমে
হাঁটা শুরু করলাম ।একটু পর লক্ষ্য করে দেখলাম আমাদের মধ্যে দূরত্ব মোটেই
কমছে না ।অবাক কান্ড !জোড় কদমে হেঁটে চললাম কিন্তু আমাদের মাঝের দূরত্ব কমল
না।খেয়াল করে দেখলাম লোকটির হাঁটার ভঙ্গি এদিকেই ।কারণ এদিক পানে মুখাবয়ব
তাই স্বাক্ষী দিচ্ছে ।লোকটি কি শূন্যে সামনের দিকে হেঁটে পিছনে যাচ্ছেন ?
আজব ব্যাপার !একটু অন্যমনষ্ক হয়ে পরলাম।ঘটনাটা ঘটল সে সময় ।হঠাৎ করে লোকটি
পাশ দিযে স্যাৎ করে চলে গেল।আগর বাতি,গোলাপ জল ও আতরের গন্ধ পেলাম ।যেগুলি
সাধারণত মৃতের লাসের কাফনে দেয়া হয়।মনে হল একটি মৃত লাস হীম শীতল বাতাস
ছড়িয়ে এই মাত্র চলে গেল।ঝট করে পিছনে ফিরলাম ।আশ্চর্য চাদের আলোর বন্যায়
কাউকে দেখতে পেরাম না।দূরে আবছা গোরস্থানটি দেখা যাচ্ছে ।মনে হলো সাদা একটি
বন্তু নতুন কবরের কাছে গিযে মিলিযে গেল ।কয়েকটি ঝিঁঝিঁ পোকা হঠাৎ করে
শব্দ করে উঠল ।পেছনে শুনতে পেলাম শেয়ালের ভৌতিক হাঁক।ভীষণ ভয় পেলাম
।চারিদিকে কেউ কোথাও নেই ।গ্রাম গুলি দূরে দূরে ।চাঁদের বন্যার আলোর ধূ ধূ
প্রান্তর।ঝলমলে চাঁদনী রাত হলেও ভীষণ ভয়ের মাত্রা বেড়ে গেল ।শীড় দাড়ায়
অনুভব করলাম ভয়ের ঠান্ডা স্রোত।লোমকূপগুলো দাড়িয়ে গেল ।দৌড় দিতে গিয়ে
দেখলাম পা সরছে না।কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে আস্তে আস্তে হাঁটতে লাগলাম।মনে
হলো পিছনে অনুস্মরণ করে কেউ আসছে ।ভুত নয়তো ?
সাহস সঞ্চয়ের জন্য ভয়ার্ত নিচু স্বরে আউড়ালাম,-
ভুত আমার পুত‚
পেত্নি আমার ঝি‚
রাম লক্ষণ বুকে আছে
করবে আমায় কি?
ভয় কাটলো না ।ভয় ও শীত একসাথে বাড়তে লাগলো।হাত পা ঠান্ডা হতে লাগলো।যদি
ভুতটা মোসলমান হয় তবেতো রাম লক্ষণের উপর ভরসা রাখা যায় না !মন্ত্রটা সংশোধন
করা প্রয়োজন।
অস্ফুট ভয় লাগা স্বরে আবৃত্তি করলাম,-
ভুত আমার পুত‚
পেত্নি আমার ঝি‚
বুকে আছেন আল্লা নবী
করবে আমায় কি?
মনে হলো পিছন থেকে কেউ মজা করে ফ্যাস ফ্যাসে গলায় হাসল ।