শুনলাম কৃষিকাজ করে এক যুবক অন্য
আরেক যুবককে বলছেন,-
‘বাংলাদেশে একলক্ষ নেতাকে মেরে
ফেললে দেশ ঠিক হবে।’
ভাবলাম আগন্তুক লোকগুলো কি আমকে নেতা ঠাউরেছে ?
আমাকে উদ্দেশ্যে বলেছে কি ?
তাদের এই সহিংস আলাপ চারিতায় কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম।
আড় চোখে দেখলাম,না তেমন কিছু
নয়,বৈষম্যের শিকার সাধারণ মানুষের আবয়ব।
হত্যাযজ্ঞ করার মতো কোন জিঘাংসা
চেহারায় নেই ।
নেহায়েত নিজেদের মধ্যে আক্ষেপের
আলাপ চারিতা ।
তারা চলে গেল।
মনে ভাবনা হলো ব্যাপার কি ?
অতি সাধারণ মানুষের এরুপ সহিংস
কথার আক্ষেপ ?
বিষয়টা অনুধাবন করলাম গ্রামে
গিয়ে ।
গ্রামের নাম রাধানগর ।
যেতে গিয়ে দেখলাম জমির দীর্ঘ
আলের উপর দিয়ে একমাত্র চলার পথ ।
একটি মেয়ে স্কুল থেকে যাচ্ছিল,
আমকে দেখে বলল,-
‘আপনাকে জুতো খুলে যেতে হবে ।না
হলে যেতে পারবেন না ।’
চেয়ে দেখলাম তার একহাতে স্কুলের
বই,অন্য হাতে স্যান্ডেল ।আল ধরে সতর্ক পায়ে এগুচ্ছে ।
তাকে আশ্বস্থ করে বললাম,-আমার
জন্য ভেবো না,আমি যেতে পারেবো।’
কি যেনো বলতে চাইল,তারপর কিছু
না বলে চলে গেল মেয়েটি।
ভাবলাম সরকারের উন্নয়ন কেন গ্রামে
স্পর্শ করে না ।
শিক্ষার হার বাড়াতে হবে ।
কিন্তৃ স্কুলে যাওয়া আসার পথের
বেহাল অবস্থা।
এখানে উন্নয়ন অনুবীক্ষণ যন্ত্র
দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ ।
গ্রামে পৌঁছে পূর্ব পরিচিত একজনের
সাক্ষাত হলো ।
কুশলাদি বিনিময়ের পর ।জানতে চাইলাম,-
‘ কেমন আছেন।’
তিনি জানালেন,-
বানের পানিতে ফসল হাড়ানোর পর
হতে খুব কষ্টে আছি।’
কোন সরকারী সাহায্য পেয়েছেন কিনা
জানতে চাইলে ;
তিনি জানালেন যে, চেয়ারম্যান,
মেম্বার ও নেতাদের ধরে অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে একটা কার্ড পেয়েছিলেন,যেটা তার অপর কৃষক
ভাইয়ের কার্ডটা কেটে তাকে দেয়া হয়েছিল।নিজের কার্ড নিজেকেই দেয়া হয়েছিল ।কিছু সাহায্য
তিনি পেয়েছিলেন ।এই সাহায্য তিনি চাননি ।কারণ ভাইকে বঞ্চিত করে তাকে দেয়া হয়েছিল।এতে
তার ভাই খুব দু:খ পেয়েছেন।ভাইয়ের কার্ড কাটা সাহায্য ছাড়া তিনি অপর কোন সাহায্য পাননি।এই
সাহায্যে ভাইয়ের সাথে মনোমালিন্য দেখা দিয়েছে বলে তিনি জানান।
শুনে খুব দু:খ পেলাম ।
তখন বুঝতে পারলাম,যুবকটি কেন
বলেছিল,-
‘বাংলাদেশে একলক্ষ নেতাকে মেরে
ফেললে দেশ ঠিক হবে।’