ব্রিটেনে সহজেই ধনী হওয়ার রমরমা প্রতারণা ব্যবসা !!!
বর্তমান
দুনিয়া তথ্য প্রযুক্তির যুগ- হালের জীবন যাপন ও স্টাইলে যেমন এসেছে নানা
চমক আর জৌলুস , তেমনি পাল্লা দিয়ে চলেছে টাকা উপার্জনের নানা ফন্দি ফিকির।
উপার্জনের কৌশল গ্রহণ প্রয়োজনীয় উপাদেয় হলেও প্রতারণার কৌশল যেন পাল্লা
দিয়ে চলেছেন নানা রূপে, নানা ছন্দে আর আকর্ষনীয় নানা প্যাকেজে।
প্রতারণার এই ফাঁদ এতোকাল তৃতীয় বিশ্বের দেশে দেশে শুনা গেলেও লন্ডনের মতো আধুনিক ও অসম্ভব ব্যস্ত শহরের একেবারে মধ্যে খানে থেকে সফিস্টিকেটেড ব্যবস্থায় হবে- সেটা অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। যার ফলে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানকে এই আধুনিক ও সফিস্টিকেটেড প্রতারকদের ধরার জন্য বিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে ট্যাকটিকস প্রণয়ন করতে হয়, সেজন্যে আলাদা ইউনিট গঠণ করতে হয়েছে, তারপরেও থামছেনা লন্ডনে প্রতারকদের প্রতারণা।
ইতোমধ্যেই এই সংঘবদ্ধ প্রতারকদল ব্রিটিশ পেনশনার আর ভালনারেবল সোসাইটির লোকদের কাছ থেকে সুকৌশলে হাতিয়ে নিয়েছে ৮.২ মিলিয়ন পাউন্ড, অর্থাৎ দিনে ৯২, ১৩৪ পাউন্ড করে বছরে।
স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের অনুসন্ধানী টিম মাঠে নামার আগেই এই প্রতারক ব্যবসায়ীরা কখনো বিদেশে প্রপার্টি বিনিয়োগ, কখনো সোনার খনিতে, ডায়মন্ড, ওয়াইন এমনকি হালের বাঙালি বাসা বাড়িতে ঢুকে কাউন্সিল, ওয়াটার, ইলেক্ট্রিক সাপ্লায়ার-মিটার রিডার, হাউজিং বেনিফিট এসেসর-ইত্যাদি নানান পরিচয়ে ঢুকে সব কিছু লুটে নিয়ে যাচ্ছে। আর চিঠি মারফৎ সফিস্টিকেটেড লেটার প্যাডে আকর্ষনীয় চিঠি লিখে ব্যবসা বাণিজ্যে বিনিয়োগ, শেয়ার ইত্যাদির বাজারে এমনকি ভুয়া ব্যাংকে বিনিয়োগের একাউন্ট নাম দিয়ে ফান্ড নিয়ে মুহুর্তেই উদাও হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। পুলিশে যখন খবর যাচ্ছে, তার আগেই প্রতারক চক্র অফিস বাসা গুটিয়ে
একেবারে লাপাত্তা।
এরকম কয়েকজনকে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড গ্রেপ্তার করে আইনে সোপর্দ করার পরেও থামছেনা এই প্রতারনা। এমনকি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র ব্রিটেনের ব্যাংক একাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড, ডেভিড কার্ড জালিয়াতি ইত্যাদির মাধ্যমে বিলিয়ন পাউন্ড হাতিয়ে নিচ্ছে। কারো কারো জেল হলেও সেই সব প্রতারনা থেকেও কাস্টমাররা রেহাই পাচ্ছেননা।
স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড এরকম প্রতারক ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে জানতে পেরেছে, যারা লোভনীয় লেটার ইস্যুর মাধ্যমে ব্রিটেনের পেনশনারদের টার্গেট করে বিনিয়োগ এবং সেই বিনিয়োগের মাধ্যমে দ্বিগুণ লাভের নিশ্চয়তা দিয়ে যোগাযোগ করে। তারা জেনে শুনেই সেই সব ক্লায়েন্টদের টার্গেট করে যাদের একাউন্টে টাকা আছে এবং যাদের রয়েছে পেনশন সহ অন্যান্য বেনিফিটের রেগুলর ইনকাম। এভাবে টার্গেট করে দামী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে তারা পেনশনারদের টার্গেট করে বিনিয়োগের মাধ্যমে ডায়মন্ড, ওয়ান ফ্যাক্টরীর মালিকানার সহজ কিছু সুযোগের অফার করে। এমনভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবসা ও বিনিয়োগের কাগজ পত্র সরবরাহ করে যাতে কারো উপায় নেই যে এগুলো সব ভুয়া এবং তাদেরকে কোনভাবে প্রতারক ব্যবসায়ী ভাববার অবকাশ রাখেনি। প্রতারক ব্যবসায়ীর নামে জনগনকে হিসেব কষে দেখায় মাসে তিন মিলিয়নের মতো আয় করা যাবে নিশ্চিত এই সব বিনিয়োগ ব্যবসায়ের আড়ালে, তার উপর ট্যাক্সেরও কোন ঝামেলা নেই, যেহেতু ব্যবসা হচ্ছে তাদের কোম্পানির নামে। এভাবে যোগাযোগের বিভিন্ন পর্যায়ে তারা প্রতিদিন ৯২,০০০ পাউন্ড ব্রিটিশ পেনশনারদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে। কিছুদিন এভাবে চলার পর যখন রিটার্ণ
আসার অপেক্ষার পালা শেষ হয়না, তখনি জনগন পুলিশের শ্মরণাপন্ন হলেই স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড মাঠে নামে। বেরিয়ে আসে এদের প্রতারনার জাল।
স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের ফ্যালকন সাইবারের হেড, ডিটেক্টিভ সুপার লেইন স্ন্যালগ্রোভ বলেন, বিনিয়োগ ব্যবসায়ের নামে প্রতারণা- এটা ব্রিটেনে একটা হাই প্রোফাইল প্রতারণা। আমরা এ ব্যাপারে অনেকগুলো অভিযোগ পেয়েছি, যারা এদের দ্বারা প্রতারিত হয়েছেন, ক্যাশ বিনিয়োগের মানি হারিয়েছেন। প্রতারক ব্যবসায়ীরা ওয়াইন, কালার ডায়মন্ড, ওয়েল ব্যবসা, ক্রেডিট ব্যবসা, এইগুলো মোটামুটি প্রতারনার নমুনা তাদের, বিনিয়োগের নামে প্রতারনার কৌশল ।
সিটি অব লন্ডন পুলিশ এ ব্যাপারে নাগরিকদের সতর্ক করেছে। লন্ডনের একেবারে কেন্দ্রে দামী অভিজাত টাওয়ার ৪২ থেকে এরা এই প্রতারনা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই ১১৫ জন এদের টার্গেটে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। যে ফিগার আমরতা পেয়েছি, তাদের প্রতারনার মাধ্যমে ৮.২ মিলিয়ন পাউন্ড পুরো বছরে বা ২.৭ মিলিয়ন মাসে অর্থাৎ ৯২,১৩৪ প্রতিদিন এরা হাতিয়ে নিয়েছে।
ডিটেক্টিভ স্ন্যালগ্রোভ জানালেন তাদের হাইলি স্কিলড সাইভার ক্রাইম হুভ-বর্তমানে লন্ডনে ১,৪০০ ইনকোয়ারি অনুসন্ধান করছে ।
এখন পর্যন্ত এই স্কোয়াড ৬৫০ জনকে এরেস্ট করেছে, যাদের মধ্যে ২৫০জনকে চার্জ প্রদান করেছে। গত বছর এই স্কোয়াডের কাছে ২৪,০০০ রিপোর্ট এসেছিলো এই সব ভিক্টিমদের কাছ থেকে।
বাঙালি অজোপাড়ায় প্রতারনার নয়া কৌশল –
ঘটনা-০১- গত সপ্তাহের শুরুতে লন্ডনের বাঙালি পাড়ার প্রাণকেন্দ্র শেড ওয়েল এলাকায় এক বাঙালি বয়স্কা মহিলার বাসায় ঢুকে প্রতারক চক্র। প্রথমে একজন দরজায় কড়া নাড়ে, জবাবে বলে ওয়াটার সাপ্লাই থেকে এসেছে পাইপ টিক করে দিতে। বয়স্কা সেই মহিলা সরল মনে ঢুকতে দিলে, একজনের পিছনে আরেক জন, এভাবে কয়েকজন। তারপর একে একে নানান পাইপ চেকের নামে চলে হরিলুট। নগদ টাকা পয়সা সহ মূল্যবান যা ছিলো সব নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় ছুরি দেখিয়ে বলে চিৎকার করলে মেরে যাবে।
প্রতারকদল সব নিয়ে চম্পট দেয়ার পরে যখন পুলিশ আসে, টেলিভিশন ক্যামেরা আসে, তখনো ভদ্র মহিলা নিজের বেনিফিটের এতো টাকা কিভাবে জমিয়েছিলেন, সেই ভয়ে প্রেস ও পুলিশকে কিছুই জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। শুধু চুরি হয়েছে বলেন।
ঘটনা-০২- কয়েক সপ্তাহ আগে টাওয়ার হ্যামলেটসের এক বাসিন্দার বাসায় কাউন্সিল থেকে হাউজিং অফিসার এসেছেন, বেনিফিট চেক করতে- এভাবে বাসায় একে একে কয়েকজন ঢুকে নানা চেক আর গল্পের ফাঁকে অন্যরা সব লুট করতে থাকলে গৃহকর্তা বাধ সাধলে ছুরি দিয়ে ভয় দেখিয়ে চুপ করে দেয়। মুহুর্তের মধ্যেই ওরা পুরো বাসা মূল্যবান জিনিষ পত্র ও নগদ টাকা পয়সা সহ নিয়ে কেটে পড়ে। পুলিশ আসার আগেই ওরা হাওয়া।
ঘটনা-০৩- ওয়াটসআপ এর মাধ্যমে জানা যায় বাঙালি পাড়ায় বিশেষ করে টাওয়ার হ্যামলেটস এরিয়ায় এভাবে নানা নামে প্রতারকরা ফ্ল্যাটে ঢুকে সোনা টাকা সব লুটে নেয়ার খবর অনেকের জানা। এরা একেক সময় একেক পরিচয় ব্যবহার করে ফ্ল্যাটে ঢুকে।
প্রতারণার আরো এক নাম লটারিতে জয়ী হয়েছেন-
এরকম স্ক্যাম লেটার অনেকেই পাওয়ার অভ্যস্থ। এমনভাবে লটারি জেতার লোভনীয় কনফারমেশন ওরা পোষ্ট করে সহজ সরল মাত্র তাদের দেয়া নির্দেশ মতো ফোন বা ফর্ম ফিল আপ করে পুরো ডিটেইলস যখন দেন, মোটা অংকের লটারির মানি ব্যাংকে ট্রান্সফারের জন্য, পরক্ষনেই দেখেন নিজের একাউন্ট থেকে সব সেভিংস সহ অভার ড্রাফট হয়ে গেছে। এভাবে অনেকেই প্রতারিত হচ্ছেন।
আরো এক ধরনের প্রতারনা উনি বিদেশে গিয়ে সব খুইয়েছেন-
এমনভাবে ইমেইল করবে আপনার বিশ্বস্থ বা আত্মীয় পরিজনের বিস্তারিত দিয়ে যে হোটেলের বিল না দিতে পেরে সর্বস্ব বা লুট হয়ে গেছে। সেখান থেকেই দিয়ে দিবেন, আপাততঃ যেন কিছু ডলার বা ব্যাংকের ডিটেইলস দেন, যাতে সে সেখান থেকে বিল চুকিয়ে আসতে পারে। আদৌ হয়তো আপনার ঐ আত্মীয় এর কিছুই জানেননা অথচ তার বিপদের কথা শুনে যেই মাত্র আপনি ফোন কল করেছেন বা ব্যাংক ডিটেইলস দিয়েছেন , তৎক্ষণাতই আপনার একাউন্ট থেকে হাজার খানেক ডলার হাওয়া।
নতুন প্রতারণা ব্যাংকের চার ডিজিট-
আপনার ক্রেডিট কার্ডে ব্যালেন্স নাই বা লিমিট শেষ, তারপরেও আপনার ক্রেডিট কার্ডে লিমিট হয়ে যাবে যদি কার্ডের ডিটেইলস দেন এবং তাকে তার জন্য নমিনাল ফি দেন- আপনি হয়তো লোভের বশে দিলেন, ক্রেডিট লিমিট আগের মতো হওয়ার বদলে দেখবেন আরো ফতুর আপনি হয়ে গেছেন, কারণ চার সিকিউরিটি ডিজিট সে জেনে গেছে। কাউকে কাউকে আবার হোল মেশিনে গিয়ে টাকা উঠানোর অফার দেয়, অথচ এভাবেও তিনি লোভের বশে প্রতারিত হন। কারণ এসব প্রতারকদের ভিন্ন ভিন্ন কৌশল।
স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের এই ডিতেক্টিভ বললেন, এ রকম স্ক্যাম ব্রিটেনে হচ্ছে, আমরা দেখছি। এদের বিরুদ্ধে আমরা কাজ করছি। তবে এইসব সাইবার ক্রাইম শুধু ব্রিটেনে নয় বিশ্বব্যাপী হচ্ছে। তাই এটা লন্ডন সহ বিশ্বব্যাপী একটা বড় ধরনের সমস্যা।
প্রতারণার এই ফাঁদ এতোকাল তৃতীয় বিশ্বের দেশে দেশে শুনা গেলেও লন্ডনের মতো আধুনিক ও অসম্ভব ব্যস্ত শহরের একেবারে মধ্যে খানে থেকে সফিস্টিকেটেড ব্যবস্থায় হবে- সেটা অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। যার ফলে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানকে এই আধুনিক ও সফিস্টিকেটেড প্রতারকদের ধরার জন্য বিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে ট্যাকটিকস প্রণয়ন করতে হয়, সেজন্যে আলাদা ইউনিট গঠণ করতে হয়েছে, তারপরেও থামছেনা লন্ডনে প্রতারকদের প্রতারণা।
ইতোমধ্যেই এই সংঘবদ্ধ প্রতারকদল ব্রিটিশ পেনশনার আর ভালনারেবল সোসাইটির লোকদের কাছ থেকে সুকৌশলে হাতিয়ে নিয়েছে ৮.২ মিলিয়ন পাউন্ড, অর্থাৎ দিনে ৯২, ১৩৪ পাউন্ড করে বছরে।
স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের অনুসন্ধানী টিম মাঠে নামার আগেই এই প্রতারক ব্যবসায়ীরা কখনো বিদেশে প্রপার্টি বিনিয়োগ, কখনো সোনার খনিতে, ডায়মন্ড, ওয়াইন এমনকি হালের বাঙালি বাসা বাড়িতে ঢুকে কাউন্সিল, ওয়াটার, ইলেক্ট্রিক সাপ্লায়ার-মিটার রিডার, হাউজিং বেনিফিট এসেসর-ইত্যাদি নানান পরিচয়ে ঢুকে সব কিছু লুটে নিয়ে যাচ্ছে। আর চিঠি মারফৎ সফিস্টিকেটেড লেটার প্যাডে আকর্ষনীয় চিঠি লিখে ব্যবসা বাণিজ্যে বিনিয়োগ, শেয়ার ইত্যাদির বাজারে এমনকি ভুয়া ব্যাংকে বিনিয়োগের একাউন্ট নাম দিয়ে ফান্ড নিয়ে মুহুর্তেই উদাও হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। পুলিশে যখন খবর যাচ্ছে, তার আগেই প্রতারক চক্র অফিস বাসা গুটিয়ে
একেবারে লাপাত্তা।
এরকম কয়েকজনকে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড গ্রেপ্তার করে আইনে সোপর্দ করার পরেও থামছেনা এই প্রতারনা। এমনকি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র ব্রিটেনের ব্যাংক একাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড, ডেভিড কার্ড জালিয়াতি ইত্যাদির মাধ্যমে বিলিয়ন পাউন্ড হাতিয়ে নিচ্ছে। কারো কারো জেল হলেও সেই সব প্রতারনা থেকেও কাস্টমাররা রেহাই পাচ্ছেননা।
স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড এরকম প্রতারক ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে জানতে পেরেছে, যারা লোভনীয় লেটার ইস্যুর মাধ্যমে ব্রিটেনের পেনশনারদের টার্গেট করে বিনিয়োগ এবং সেই বিনিয়োগের মাধ্যমে দ্বিগুণ লাভের নিশ্চয়তা দিয়ে যোগাযোগ করে। তারা জেনে শুনেই সেই সব ক্লায়েন্টদের টার্গেট করে যাদের একাউন্টে টাকা আছে এবং যাদের রয়েছে পেনশন সহ অন্যান্য বেনিফিটের রেগুলর ইনকাম। এভাবে টার্গেট করে দামী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে তারা পেনশনারদের টার্গেট করে বিনিয়োগের মাধ্যমে ডায়মন্ড, ওয়ান ফ্যাক্টরীর মালিকানার সহজ কিছু সুযোগের অফার করে। এমনভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবসা ও বিনিয়োগের কাগজ পত্র সরবরাহ করে যাতে কারো উপায় নেই যে এগুলো সব ভুয়া এবং তাদেরকে কোনভাবে প্রতারক ব্যবসায়ী ভাববার অবকাশ রাখেনি। প্রতারক ব্যবসায়ীর নামে জনগনকে হিসেব কষে দেখায় মাসে তিন মিলিয়নের মতো আয় করা যাবে নিশ্চিত এই সব বিনিয়োগ ব্যবসায়ের আড়ালে, তার উপর ট্যাক্সেরও কোন ঝামেলা নেই, যেহেতু ব্যবসা হচ্ছে তাদের কোম্পানির নামে। এভাবে যোগাযোগের বিভিন্ন পর্যায়ে তারা প্রতিদিন ৯২,০০০ পাউন্ড ব্রিটিশ পেনশনারদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে। কিছুদিন এভাবে চলার পর যখন রিটার্ণ
আসার অপেক্ষার পালা শেষ হয়না, তখনি জনগন পুলিশের শ্মরণাপন্ন হলেই স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড মাঠে নামে। বেরিয়ে আসে এদের প্রতারনার জাল।
স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের ফ্যালকন সাইবারের হেড, ডিটেক্টিভ সুপার লেইন স্ন্যালগ্রোভ বলেন, বিনিয়োগ ব্যবসায়ের নামে প্রতারণা- এটা ব্রিটেনে একটা হাই প্রোফাইল প্রতারণা। আমরা এ ব্যাপারে অনেকগুলো অভিযোগ পেয়েছি, যারা এদের দ্বারা প্রতারিত হয়েছেন, ক্যাশ বিনিয়োগের মানি হারিয়েছেন। প্রতারক ব্যবসায়ীরা ওয়াইন, কালার ডায়মন্ড, ওয়েল ব্যবসা, ক্রেডিট ব্যবসা, এইগুলো মোটামুটি প্রতারনার নমুনা তাদের, বিনিয়োগের নামে প্রতারনার কৌশল ।
সিটি অব লন্ডন পুলিশ এ ব্যাপারে নাগরিকদের সতর্ক করেছে। লন্ডনের একেবারে কেন্দ্রে দামী অভিজাত টাওয়ার ৪২ থেকে এরা এই প্রতারনা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই ১১৫ জন এদের টার্গেটে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। যে ফিগার আমরতা পেয়েছি, তাদের প্রতারনার মাধ্যমে ৮.২ মিলিয়ন পাউন্ড পুরো বছরে বা ২.৭ মিলিয়ন মাসে অর্থাৎ ৯২,১৩৪ প্রতিদিন এরা হাতিয়ে নিয়েছে।
ডিটেক্টিভ স্ন্যালগ্রোভ জানালেন তাদের হাইলি স্কিলড সাইভার ক্রাইম হুভ-বর্তমানে লন্ডনে ১,৪০০ ইনকোয়ারি অনুসন্ধান করছে ।
এখন পর্যন্ত এই স্কোয়াড ৬৫০ জনকে এরেস্ট করেছে, যাদের মধ্যে ২৫০জনকে চার্জ প্রদান করেছে। গত বছর এই স্কোয়াডের কাছে ২৪,০০০ রিপোর্ট এসেছিলো এই সব ভিক্টিমদের কাছ থেকে।
বাঙালি অজোপাড়ায় প্রতারনার নয়া কৌশল –
ঘটনা-০১- গত সপ্তাহের শুরুতে লন্ডনের বাঙালি পাড়ার প্রাণকেন্দ্র শেড ওয়েল এলাকায় এক বাঙালি বয়স্কা মহিলার বাসায় ঢুকে প্রতারক চক্র। প্রথমে একজন দরজায় কড়া নাড়ে, জবাবে বলে ওয়াটার সাপ্লাই থেকে এসেছে পাইপ টিক করে দিতে। বয়স্কা সেই মহিলা সরল মনে ঢুকতে দিলে, একজনের পিছনে আরেক জন, এভাবে কয়েকজন। তারপর একে একে নানান পাইপ চেকের নামে চলে হরিলুট। নগদ টাকা পয়সা সহ মূল্যবান যা ছিলো সব নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় ছুরি দেখিয়ে বলে চিৎকার করলে মেরে যাবে।
প্রতারকদল সব নিয়ে চম্পট দেয়ার পরে যখন পুলিশ আসে, টেলিভিশন ক্যামেরা আসে, তখনো ভদ্র মহিলা নিজের বেনিফিটের এতো টাকা কিভাবে জমিয়েছিলেন, সেই ভয়ে প্রেস ও পুলিশকে কিছুই জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। শুধু চুরি হয়েছে বলেন।
ঘটনা-০২- কয়েক সপ্তাহ আগে টাওয়ার হ্যামলেটসের এক বাসিন্দার বাসায় কাউন্সিল থেকে হাউজিং অফিসার এসেছেন, বেনিফিট চেক করতে- এভাবে বাসায় একে একে কয়েকজন ঢুকে নানা চেক আর গল্পের ফাঁকে অন্যরা সব লুট করতে থাকলে গৃহকর্তা বাধ সাধলে ছুরি দিয়ে ভয় দেখিয়ে চুপ করে দেয়। মুহুর্তের মধ্যেই ওরা পুরো বাসা মূল্যবান জিনিষ পত্র ও নগদ টাকা পয়সা সহ নিয়ে কেটে পড়ে। পুলিশ আসার আগেই ওরা হাওয়া।
ঘটনা-০৩- ওয়াটসআপ এর মাধ্যমে জানা যায় বাঙালি পাড়ায় বিশেষ করে টাওয়ার হ্যামলেটস এরিয়ায় এভাবে নানা নামে প্রতারকরা ফ্ল্যাটে ঢুকে সোনা টাকা সব লুটে নেয়ার খবর অনেকের জানা। এরা একেক সময় একেক পরিচয় ব্যবহার করে ফ্ল্যাটে ঢুকে।
প্রতারণার আরো এক নাম লটারিতে জয়ী হয়েছেন-
এরকম স্ক্যাম লেটার অনেকেই পাওয়ার অভ্যস্থ। এমনভাবে লটারি জেতার লোভনীয় কনফারমেশন ওরা পোষ্ট করে সহজ সরল মাত্র তাদের দেয়া নির্দেশ মতো ফোন বা ফর্ম ফিল আপ করে পুরো ডিটেইলস যখন দেন, মোটা অংকের লটারির মানি ব্যাংকে ট্রান্সফারের জন্য, পরক্ষনেই দেখেন নিজের একাউন্ট থেকে সব সেভিংস সহ অভার ড্রাফট হয়ে গেছে। এভাবে অনেকেই প্রতারিত হচ্ছেন।
আরো এক ধরনের প্রতারনা উনি বিদেশে গিয়ে সব খুইয়েছেন-
এমনভাবে ইমেইল করবে আপনার বিশ্বস্থ বা আত্মীয় পরিজনের বিস্তারিত দিয়ে যে হোটেলের বিল না দিতে পেরে সর্বস্ব বা লুট হয়ে গেছে। সেখান থেকেই দিয়ে দিবেন, আপাততঃ যেন কিছু ডলার বা ব্যাংকের ডিটেইলস দেন, যাতে সে সেখান থেকে বিল চুকিয়ে আসতে পারে। আদৌ হয়তো আপনার ঐ আত্মীয় এর কিছুই জানেননা অথচ তার বিপদের কথা শুনে যেই মাত্র আপনি ফোন কল করেছেন বা ব্যাংক ডিটেইলস দিয়েছেন , তৎক্ষণাতই আপনার একাউন্ট থেকে হাজার খানেক ডলার হাওয়া।
নতুন প্রতারণা ব্যাংকের চার ডিজিট-
আপনার ক্রেডিট কার্ডে ব্যালেন্স নাই বা লিমিট শেষ, তারপরেও আপনার ক্রেডিট কার্ডে লিমিট হয়ে যাবে যদি কার্ডের ডিটেইলস দেন এবং তাকে তার জন্য নমিনাল ফি দেন- আপনি হয়তো লোভের বশে দিলেন, ক্রেডিট লিমিট আগের মতো হওয়ার বদলে দেখবেন আরো ফতুর আপনি হয়ে গেছেন, কারণ চার সিকিউরিটি ডিজিট সে জেনে গেছে। কাউকে কাউকে আবার হোল মেশিনে গিয়ে টাকা উঠানোর অফার দেয়, অথচ এভাবেও তিনি লোভের বশে প্রতারিত হন। কারণ এসব প্রতারকদের ভিন্ন ভিন্ন কৌশল।
স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের এই ডিতেক্টিভ বললেন, এ রকম স্ক্যাম ব্রিটেনে হচ্ছে, আমরা দেখছি। এদের বিরুদ্ধে আমরা কাজ করছি। তবে এইসব সাইবার ক্রাইম শুধু ব্রিটেনে নয় বিশ্বব্যাপী হচ্ছে। তাই এটা লন্ডন সহ বিশ্বব্যাপী একটা বড় ধরনের সমস্যা।
কপি ফ্রম-
সৈয়দ শাহ সেলিম আহমদ
No comments:
Post a Comment