Monday, August 17, 2015

পানিকে পানযোগ্য করার বই আবিষ্কার !


পানিকে পানযোগ্য করার বই আবিষ্কার

পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধে সহায়তার জন্য একজন রসায়নবিদ ও একজন গ্রাফিক ডিজাইনারের যৌথ প্রয়াসে তৈরি করা হয়েছে একটি পানযোগ্য বই। এর প্রতিটি পাতায় রয়েছে সিলভার ন্যানোপার্টিকল বা রুপার অতি ক্ষুদ্র কণার আবরণ, যা দূষিত পানি থেকে সব ধরনের ব্যাকটেরিয়া অপসারণ করে। এটি খুব সাশ্রয়ী।স্কুলগামী শিশুদের কথা ভাবার সময় আমরা কল্পনায় দেখতে পাই, তারা খাবারের বাক্স বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তারা দূষিত পানি নিয়ে যাচ্ছে, এমন কথা আমরা নিশ্চয়ই ভাবতে চাই না। কিন্তু ঘানার টোলন ও কুমবুঙ্গু জেলায় সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাপারটাই ঘটছে, জানালেন ইদ্রিস আবদুল আজিজ বোয়ার। তিনি দেশটিতে ওয়াটারইজলাইফ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক। ইদ্রিস আরও বলেন, ওই দুই জেলার প্রতি ১০টি শিশুর আটজনই স্কুলে দূষিত পানি পান করে। ফলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ক্লাসে অনুপস্থিত থাকে। তৃষ্ণা মেটাতেই তারা দূষিত পানি পান করে। স্বাস্থে্যর কী ক্ষতি হবে, তা ভাবার অবকাশ কোথায়!
অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতোই ঘানার আবালবৃদ্ধবনিতারা দূষিত পানির বিপদ সম্পর্কে অজ্ঞ। এই পানি থেকে কলেরা, আমাশয়, হেপাটাইটিস এ এবং টাইফয়েড রোগ হতে পারে। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ওয়াটার ডট ওআরজি বলছে, পানিবাহিত রোগে প্রতিবছর ৩৪ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত পানি পরিশোধনের পদ্ধতিগুলো অত্যন্ত ব্যয়বহুল বা সহজে ব্যবহারোপযোগী নয়। কিন্তু চিন্তা নেই, এসে গেছে পানযোগ্য বই।

যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা অঙ্গরাজ্যের এডমন্ডভিত্তিক দাতব্য প্রতিষ্ঠান ওয়াটারইজলাইফের প্রধান ক্রিস্টিন বেন্ডার বলেন, ব্যক্তি ও সামাজিক পর্যায়ে ব্যবহারের উপযোগী পানি পরিশোধক তৈরি করার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। পানি পরিশোধনের এ বইটি খুবই চমৎকার ও উদ্ভাবনমূলক একটি উপকরণ, যা জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক চাহিদা বিশুদ্ধ পানির সংস্থানে সহায়তা করে।

বই কীভাবে পানি পরিশোধন করে? যেকোনো বইয়ের মতো এই বিশেষ বইয়েও আছে পৃষ্ঠা। কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নবিদ তেরেসা ড্যাংকোভিচ বেশ কয়েক বছর আগে ব্যাকটেরিয়ারোধী একটি পানির ফিল্টার তৈরি করেন। তাতে তিনি সিলভার ন্যানোপার্টিকলে আবৃত কাগজ ব্যবহার করেন, যা পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের জন্য দায়ী মারাত্মক অণুজীবগুলো ধ্বংস করতে পারে।কাজের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে একটি সাশ্রয়ী ফিল্টার তৈরির প্রতি তেরেসার আগ্রহ বাড়তে থাকে। তিনি ২০০৯ সালে প্রথম প্রমাণ করেন, রুপায় আবৃত কাগজ ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে পারে। এই বিশেষ ফিল্টারের দাম মাত্র কয়েক পেনি (১০০ পেনি = ১ ডলার)। আর এটি কার্যকর থাকে ৩০ দিন।ফিল্টারে ব্যবহৃত প্রতিটি কাগজেই বিভিন্ন বার্তা লেখা থাকবে।

কাগজটি শক্ত। অনেকটা পাতলা কার্ডবোর্ডের মতো। প্রথমে সাদা থাকলেও সিলভার ন্যানোপার্টিকলের বিক্রিয়ায় প্রথমে এটি উজ্জ্বল হলুদ ও পরে গাঢ় কমলা রং ধারণ করে। তাই সে কাগজে লেখার উপযোগী কালি খুঁজে বের করা ছিল বেশ কঠিন। গার্টসাইড বলেন, রং করার কাজে ব্যবহৃত অধিকাংশ কালিতে বাজে রাসায়নিক উপাদান থাকে। সেগুলো খাবার পানিতে মেশানোও ক্ষতিকর। পরে একজন ফেরিওয়ালাকে দিয়ে তৈরি করানো হয় স্বাস্থ্যকর কালি। বইয়ের প্রথম পাতায় লেখা হয়, ‘আপনার গ্রামের পানিতে মারাত্মক রোগের জীবাণু থাকতে পারে। কিন্তু এই বইয়ের প্রতিটি পাতায় রয়েছে পানির ফিল্টার। আপনার পানিকে তা নিরাপদ করে দেবে।’

ইংরেজির পাশাপাশি স্থানীয় বিভিন্ন ভাষায়ও-যেমন কেনিয়ার জন্য সোয়াহিলি-২৪ পৃষ্ঠার প্রতিটি বই লেখা হয়েছে। বইটি চার বছর টিকবে। তেরেসা গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকার একটি নদীর পানি পরিশোধনে ওই ফিল্টার ব্যবহার করেন। সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়। গবেষণায় প্রমাণিত হয়, ফিল্টারটি কার্যকর।

ওয়াটারইজলাইফের অর্থায়নে আগামী বছর থেকে হাইতি, কেনিয়া, ভারত ও ঘানার বিভিন্ন গ্রামে বইটি সরবরাহ করা হবে। এতে লাখো মানুষ নিরাপদ পানি পানের সুযোগ পাবে। ওয়াটারইজলাইফের আওতাধীন ৩৩টি দেশেই এই ফিল্টার ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

No comments:

Post a Comment

Monday, August 17, 2015

পানিকে পানযোগ্য করার বই আবিষ্কার !


পানিকে পানযোগ্য করার বই আবিষ্কার

পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধে সহায়তার জন্য একজন রসায়নবিদ ও একজন গ্রাফিক ডিজাইনারের যৌথ প্রয়াসে তৈরি করা হয়েছে একটি পানযোগ্য বই। এর প্রতিটি পাতায় রয়েছে সিলভার ন্যানোপার্টিকল বা রুপার অতি ক্ষুদ্র কণার আবরণ, যা দূষিত পানি থেকে সব ধরনের ব্যাকটেরিয়া অপসারণ করে। এটি খুব সাশ্রয়ী।স্কুলগামী শিশুদের কথা ভাবার সময় আমরা কল্পনায় দেখতে পাই, তারা খাবারের বাক্স বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তারা দূষিত পানি নিয়ে যাচ্ছে, এমন কথা আমরা নিশ্চয়ই ভাবতে চাই না। কিন্তু ঘানার টোলন ও কুমবুঙ্গু জেলায় সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাপারটাই ঘটছে, জানালেন ইদ্রিস আবদুল আজিজ বোয়ার। তিনি দেশটিতে ওয়াটারইজলাইফ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক। ইদ্রিস আরও বলেন, ওই দুই জেলার প্রতি ১০টি শিশুর আটজনই স্কুলে দূষিত পানি পান করে। ফলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ক্লাসে অনুপস্থিত থাকে। তৃষ্ণা মেটাতেই তারা দূষিত পানি পান করে। স্বাস্থে্যর কী ক্ষতি হবে, তা ভাবার অবকাশ কোথায়!
অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতোই ঘানার আবালবৃদ্ধবনিতারা দূষিত পানির বিপদ সম্পর্কে অজ্ঞ। এই পানি থেকে কলেরা, আমাশয়, হেপাটাইটিস এ এবং টাইফয়েড রোগ হতে পারে। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ওয়াটার ডট ওআরজি বলছে, পানিবাহিত রোগে প্রতিবছর ৩৪ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত পানি পরিশোধনের পদ্ধতিগুলো অত্যন্ত ব্যয়বহুল বা সহজে ব্যবহারোপযোগী নয়। কিন্তু চিন্তা নেই, এসে গেছে পানযোগ্য বই।

যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা অঙ্গরাজ্যের এডমন্ডভিত্তিক দাতব্য প্রতিষ্ঠান ওয়াটারইজলাইফের প্রধান ক্রিস্টিন বেন্ডার বলেন, ব্যক্তি ও সামাজিক পর্যায়ে ব্যবহারের উপযোগী পানি পরিশোধক তৈরি করার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। পানি পরিশোধনের এ বইটি খুবই চমৎকার ও উদ্ভাবনমূলক একটি উপকরণ, যা জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক চাহিদা বিশুদ্ধ পানির সংস্থানে সহায়তা করে।

বই কীভাবে পানি পরিশোধন করে? যেকোনো বইয়ের মতো এই বিশেষ বইয়েও আছে পৃষ্ঠা। কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নবিদ তেরেসা ড্যাংকোভিচ বেশ কয়েক বছর আগে ব্যাকটেরিয়ারোধী একটি পানির ফিল্টার তৈরি করেন। তাতে তিনি সিলভার ন্যানোপার্টিকলে আবৃত কাগজ ব্যবহার করেন, যা পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের জন্য দায়ী মারাত্মক অণুজীবগুলো ধ্বংস করতে পারে।কাজের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে একটি সাশ্রয়ী ফিল্টার তৈরির প্রতি তেরেসার আগ্রহ বাড়তে থাকে। তিনি ২০০৯ সালে প্রথম প্রমাণ করেন, রুপায় আবৃত কাগজ ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে পারে। এই বিশেষ ফিল্টারের দাম মাত্র কয়েক পেনি (১০০ পেনি = ১ ডলার)। আর এটি কার্যকর থাকে ৩০ দিন।ফিল্টারে ব্যবহৃত প্রতিটি কাগজেই বিভিন্ন বার্তা লেখা থাকবে।

কাগজটি শক্ত। অনেকটা পাতলা কার্ডবোর্ডের মতো। প্রথমে সাদা থাকলেও সিলভার ন্যানোপার্টিকলের বিক্রিয়ায় প্রথমে এটি উজ্জ্বল হলুদ ও পরে গাঢ় কমলা রং ধারণ করে। তাই সে কাগজে লেখার উপযোগী কালি খুঁজে বের করা ছিল বেশ কঠিন। গার্টসাইড বলেন, রং করার কাজে ব্যবহৃত অধিকাংশ কালিতে বাজে রাসায়নিক উপাদান থাকে। সেগুলো খাবার পানিতে মেশানোও ক্ষতিকর। পরে একজন ফেরিওয়ালাকে দিয়ে তৈরি করানো হয় স্বাস্থ্যকর কালি। বইয়ের প্রথম পাতায় লেখা হয়, ‘আপনার গ্রামের পানিতে মারাত্মক রোগের জীবাণু থাকতে পারে। কিন্তু এই বইয়ের প্রতিটি পাতায় রয়েছে পানির ফিল্টার। আপনার পানিকে তা নিরাপদ করে দেবে।’

ইংরেজির পাশাপাশি স্থানীয় বিভিন্ন ভাষায়ও-যেমন কেনিয়ার জন্য সোয়াহিলি-২৪ পৃষ্ঠার প্রতিটি বই লেখা হয়েছে। বইটি চার বছর টিকবে। তেরেসা গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকার একটি নদীর পানি পরিশোধনে ওই ফিল্টার ব্যবহার করেন। সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়। গবেষণায় প্রমাণিত হয়, ফিল্টারটি কার্যকর।

ওয়াটারইজলাইফের অর্থায়নে আগামী বছর থেকে হাইতি, কেনিয়া, ভারত ও ঘানার বিভিন্ন গ্রামে বইটি সরবরাহ করা হবে। এতে লাখো মানুষ নিরাপদ পানি পানের সুযোগ পাবে। ওয়াটারইজলাইফের আওতাধীন ৩৩টি দেশেই এই ফিল্টার ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

No comments:

Post a Comment