চীর বৈষম্যের বাংলাদেশ, শিক্ষা , স্রষ্টা ও দেবতারা
দেবতারা বাংলাদেশেীদের ফরিয়াদ শুনে শুনে চরম বিরক্ত ।দেবতারা ফরিয়াদগুলো বিশ্লেষণ
করে জানতে পারলেন,সকল ফরিয়াদের মূলে রয়েছে বৈষম্য ।দেশটির বৈষম্যের শিকার জনগণকে বাঁচানোর
জন্য স্বাধীন করে দেয়া হয়েছিল ।কিন্তু সেই বৈষম্য আরো বৃদ্ধি পেয়েছে ।বেড়েছে ফরিয়াদের
পরিমান।ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে এর প্রতিকারের প্রার্থণায় দেবতারা স্রষ্টার স্মরানাপন্ন
হলেন ।এদিকে স্রষ্ট্রার অনেক বয়স হয়েছে,আজকাল দৈনন্দিন কাজগুলি ঠিকভাবে করতে পারেন
না।তালগুল পাকিয়ে ফেলেন।নি:সঙ্গ স্রষ্টা দেবতাদের কাছে পেলে বাচলের মতো বকতে থাকেন।দেবতাদের
জনগুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য আসা হয়,সেটি না করে অপ্রাসঙ্গিক বিষয় অবতারণা
করে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন স্রষ্টা ।তাই দেবতারা পারতপক্ষে স্রষ্টার দ্বার মাড়ান না।কিন্তু
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বিরক্তিতে উপায়হীন দেবতাদের স্রষ্টার নিকট আসতেই হলো ।শুরুতেই স্রষ্টা
বাংলাদেশ প্রসংগে না গিয়ে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের আলোক পাত করলেন ।
স্রষ্টা বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি সম্পর্কে দেবতাদের বোঝাচ্ছিলেন যে সব কিছুই তিনি ভারসাম্য রক্ষা করে তৈরি করেছেন বৈষম্য করেননি করো সাথে।
দেবতাদের বোঝাতে স্রষ্টা উদাহরণ দেন, যেমন প্রতি ১০টি হরিণের জন্য আমি একটি সিংহ সৃষ্টি করেছি।
আমি আমেরিকা বানিয়েছি, তাদের সম্পদ-ঐশ্বর্য দিয়েছি, কিন্তু নিরাপত্তার জন্য তাদের সর্বদা উদ্বিগ্ন করে রেখেছি।
আফ্রিকায় অনিন্দ্যসুন্দর প্রকৃতি দিলেও তাদের গতিবিধি সীমিত করে দিয়েছি, সব জায়গায় তারা যেতে পারে না।
নেপালকে এভারেস্ট দিয়েছি, কিন্তু সমুদ্র থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত রেখেছি।
দেবতাদের কাছে বাংলাদেশ একটি সুন্দর পছন্দনীয় দেশ,স্রষ্টার
কাছেও।এ অবস্থায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এক দেবতা দাঁড়িয়ে স্রষ্টার কাছে জানতে চান, আপনার সৃষ্ট সেরা দেশ কোনটি ?
স্রষ্টা নিঃসংকোচে জবাব দেন, অবশ্যই বাংলাদেশ আমার সেরা সৃষ্টি।
যেদিকেই তাকাবে, সেদিকেই প্রাণজুড়ানো সবুজের সমারোহ।
এখানকার মানুষগুলো খুবই ভালো।ধর্ম
ভীরু ।
অত্যন্ত নরম প্রকৃতির হৃদয় তাদের।
আবার বিরতিহীন চলল বাংলাদেশ সম্পর্কে স্রষ্টার লেকচার…
কিন্তু আপনি যে বললেন, সব কিছুই ভারসাম্য বৈষম্যহীন ভাবে রক্ষা করে তৈরি করেছেন, দেবতা আবারও প্রশ্ন করেন স্রষ্টাকে।
স্রষ্টা মৃদু হেসে জবাব দেন, বাংলাদেশেও ও ভারসাম্য রক্ষার কোনো ব্যত্যয় করা হয়নি।
একটু লক্ষ্য করলেই দেখবে, ভারসাম্য রক্ষার জন্য তাদের কেমন শিক্ষা ব্যবস্থা দিয়েছি।
শিক্ষার নিম্নমানের কারণে বাংলাদেশে চাকরির জন্য বিদেশিদের ভাড়া করে আনতে হয়। বাংলাদেশে নিয়োগের বিজ্ঞাপন ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশে প্রকাশ করতে হয়।
বাংলাদেশের মেধাবীরা পড়ে শুধু একটি চাকুরীর জন্য,দক্ষতার জন্য
নয়।
দক্ষতার অভাবের কারণে একদিকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে পুষতে হয় বিদেশিদের,
আর অন্যদিকে চিকিৎসার জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে হয় বিদেশের মাটিতে।
এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে ভবিষ্যতে সরকার চালানোর জন্যও দক্ষ জনবল পেতে বিদেশে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে….
স্রষ্টা্র লেকচার চলতেই থাকল…
দেবতারা হতাশ বিরক্ত !বাংলাদেশীদের বৈষম্য ?স্রষ্টার সমাধান
কই ? নাই !!
দেবতারা দেখলেন স্রষ্টা বাংলাদেশী মানুষদের বৈষম্য জনিত অত্যাচরের
ফরিয়াদের বিষয়ে কিছুই বলছেন না। অগত্যা তারা আরো বিরক্ত হলেন ।দেবতাদের স্রষ্টার মুখের
উপর কথা বলা বা প্রতিবাদ করার নিয়ম নেই ।তারা তো আর জামাত বি এন পি করেন না।যদি স্রষ্টার
কথার প্রতিবাদ করা হয় ।তা হলে স্রষ্টা দেবতাদের উপর বিরক্ত হয়ে ,দেবালয়ে অসুরদের ক্ষমতায়ন
করতে পারেন ।যা দেবতাদের জন্য কোনমতেই সুখকর হবে না ।এই অবস্থায় দেবতারা বাংলাদেশীয়দের
ফরিয়াদ জনিত বিরক্তির কোন সমাধান না পেয়ে আরো বিরক্ত হতে থাকলেন।যা অভিশাপ হয়ে সাধারণ
বাংলাদেশীদের উপর বর্ষিত হতে থাকলো ।আর স্রষ্টার এইরুপ খাম খেয়ালীর কারণে বাংলাদেশে
সুবিধাবাদীদের ভোগ বিলাসের বিপরীতে বৈষম্যের শৃঙ্খল বাড়তেই থাকলো।দেবতারা সিদ্ধান্ত
নিল বাংলাদেশীদের কোন ফরিয়াদ শুনবেন না,স্রষ্টার লেকচারও আর শুনতে চান না।অতএব দেবতারা
কানে তুলা দিলেন।